বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা বোঝা নয়


প্রকাশিত: ০২:০৪ এএম, ০২ এপ্রিল ২০১৭

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আমরা এক কথায় ‘অটিস্টিক শিশু’ বলে থাকি। তারা কিন্তু আমাদের আশেপাশেই বেড়ে উঠছে। এমনকী আমাদেরই আত্মীয়-স্বজন। তবে তারা পরিপূর্ণতা নিয়ে হয়তো জন্ম নিতে পারেনি। এজন্যই তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। কেউ জন্ম থেকেই, কেউ বা জন্মের পরে আবার কেউ বিভিন্ন কারণে এমন হতে পারে।

অটিজম শব্দটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ নিজ থেকে এসেছে। শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন সুইস মনোবিজ্ঞানী ডা. অয়গেন বয়লার। অটিজম শিশুর মানসিক পীড়াবিশেষ। এটি কোনো রোগ নয়। স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যার বিস্তৃত রূপ যা অটিজ স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত।

সমস্যাটি শৈশবের আগে থেকে শুরু হয়, যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান বিষয়। এ ছাড়াও অটিজম রয়েছে এমন শিশুর শারীরিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ও ইন্দ্রিয়ানুভূতি সংক্রান্ত সমস্যাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

atism

তবে সব অটিস্টিক শিশুই এক রকম নয়। অটিজমের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যে কম-বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার কিছু বৈশিষ্ট্য প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অটিজম স্পেকট্রামে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অটিজম লক্ষ্য করা যায়। অটিজম শিশুর সামাজিক ও বাচনিক বিকাশের এক রকম প্রতিবন্ধকতা। অটিজম মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যা বা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করে। মস্তিষ্কের অসমবিকাশ ও বিকাশগত প্রতিবন্ধকতাই অটিজম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজমকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যার সাংকেতিক নম্বর হলো এক ৮৪.০। আমাদের কারো না কারো পরিবারেই বাস করছে তারা। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অপূর্ণতায় তাদের আলাদা চোখে দেখছি আমরা। সবকিছু থেকে বঞ্চিত করছি তাদের। তাদেরকে আমরা মনে করছি বোঝা। পারিবারিক শান্তি বিনষ্টের কারণ হিসেবেও উল্লেখ করেন কেউ কেউ। অথচ আমাদের একটু সচেতনতার অভাবেই আজ তাদের এমন পরিণতি। আমরা একটু সচেতন হলেই অটিজম শিশুদের মাঝে খুঁজে পেতে পারি অপার সম্ভাবনা।

তবে অবেহলার সেই ভয়াবহ দিন এখন আর নেই। সচেতনতা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেও। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতিপালন এবং পরিচর্যার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখছে সরকার এবং কিছু সংগঠন। বিশেষ করে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।

atism

সায়মা ওয়াজেদের হাত ধরেই সিয়ারোভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অটিজম নিয়ে সর্বাগ্রে কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অগ্রপথিক হিসেবে বিষয়টিকে সিয়ারোভুক্ত দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাসীর নজরে এনেছেন।

তার উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যখাতে খাতভিত্তিক কর্মসূচিতে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত ডিজঅর্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করে। নিউরো ডেভেলপমেন্ট ও অটিজম নামে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের পাশাপাশি ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজে শিশুদের এ ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করতে বিশেষ ইউনিট চালু করেছে।

তাই বলতে পারি, শিশুদের বাবা-মায়েদের দায়িত্বশীল আচরণ এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিক পরিবেশ ও পরিচর্যা পেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে। আসুন আমরা তাদের প্রতি যত্নশীল হই। অটিজম দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।