স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী


প্রকাশিত: ০২:০৪ এএম, ৩০ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মরহুম সৈয়দ মহসিন আলীকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-

সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ভারতের উত্তর প্রদেশের ভারতীয় শিক্ষা পরিষদ থেকে বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে পরিবার পরিকল্পনা এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সৈয়দ মহসিন আলী ছাত্রাবস্থায়ই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি চিফ-ইন-কমান্ড (সি-ইন-সি) স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে সিলেট অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা। তিনি সিলেট বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কমান্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি ১৯৯৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি সেক্টর কমান্ডার ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

সৈয়দ মহসিন আলী একাধিক্রমে তিনবার মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি নিবারণ, পতিতা ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন এবং চা-শ্রমিকসহ অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

media

সৈয়দ মহসিন আলী বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ টাইমসের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ বেতার, সিলেটের সংগীতশিল্পী ছিলেন। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া তিনি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাঁকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৫’ এবং হ্যালো কলকাতা নামক কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাঁকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা ২০১৫’ প্রদান করে। তিনি ‘সৈয়দ মুজতবা আলী স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ‘মৌলভীবাজার অন্ধকল্যাণ সমিতি স্বর্ণপদক’ এ ভূষিত হন। এছাড়া তাঁকে ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৬ (মরণোত্তর)’ এবং ‘বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সম্মাননা (মরণোত্তর)’ প্রদান করা হয়।

পরোপকার ও আন্তরিকতার জন্য সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন সব মহলে সুপরিচিত ও সমাদৃত। তিনি ছিলেন সংস্কৃতিমনা প্রাণবন্ত একজন মানুষ। এ মহান রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।