পানির বদলে বালুচর


প্রকাশিত: ০৬:৩৫ এএম, ২২ মার্চ ২০১৭

শীতের শুরু থেকেই তিস্তার পানি দিন দিন শুকিয়ে ধূ-ধূ বালুচরে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদীতে এখন পানির বদলে বালুচর। তিস্তা নদীতে একসময় মন মাতানো ঢেউ ছিল, অথচ আজ শুধুই বালুচর।

দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি দাঁড়িয়ে আছে বালুচরে। এতে নদী নির্ভর মানুষগুলো জীবিকার অভাবে পথে বসেছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর যে হারে পানি প্রবাহ কমে আসছে; তাতে শীঘ্রই কাঙ্ক্ষিত পানি চুক্তি সম্পন্ন না হলে মরা খালে পরিণত হতে পারে বহুল আলোচিত তিস্তা নদী। আর তিস্তা নদীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা উত্তর জনপদের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Lalmonirhat

ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে মিলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় প্রতিবছর বর্ষা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ অংশে মরা খালে পরিণত হয় তিস্তা। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তা অববাহিকার জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

তিস্তাপাড়ের আইয়ুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিস্তা নদীর মরণ খেলায় বাপ-দাদার ভিটে-মাটি হারিয়ে গাইড বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছি। কয়েকদিনের মধ্যে তিস্তায় পানি নেই, বালু ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।’

Lalmonirhat

গতবছরের তুলনায় সেচ প্রদানে জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর কমিয়ে এনে এ বছর মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতবছর ২৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি সেচের টার্গেট নেয়া হলেও পানি স্বল্পতার কারণে মাত্র ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে সেচ সররবাহ করা হয়েছিল। এর ফলে সেচ ক্যানেলের আওতায় ব্যাপক জমির ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করতে গিয়ে কৃষকের ২/৩ গুণ খরচ বেড়ে যায়। এ বছরও তিস্তার পানি যেভাবে শুকিয়ে আসছে, তাতে কৃষকরা তাদের সেচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

Lalmonirhat

তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান জাগো নিউজকে জানান, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক কম।

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।