দিনে ফুল রাতে পাপড়ি নিয়ে ব্যস্ত আরিফা
রাত সাড়ে ৯টা। নীলক্ষেত পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন সিগন্যালে লাল বাতির যানজটে আটকে আছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও রিকশাসহ হরেকরকম যানবাহন। কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল সবুজ বাতি জ্বলে উঠার আগে কোন যানবাহন যেন এগিয়ে যেতে না পারে দু’হাত সামনে প্রসারিত করে পথ আটকে রেখেছে। যানজটে আটকা পড়া সবার দৃষ্টি সিগন্যালের নিচে।
নিয়নবাতির আলো আধারে মাটিতে বসে থাকা আনুমানিক ৬-৭ বছরের একটি মেয়ে। পায়ে জুতা নেই। পরিধেয় কামিজটা বুকের ওপর তুলে হাটুতে চেপে ধরে মেয়েটিকে শুকনো গোলাপ ফুল থেকে পাপড়ি ছিঁড়ে ছিঁড়ে একটি পানি ভর্তি বোলের ওপর রাখছিল। কিছুক্ষণ পর পর পাপড়িগুলো পানিতে ভালোভাবে ধুইয়ে একটি পলিথিনে ভরে রাখছিল।
এ সময় আরিফা আরিফা ডাকতে ডাকতে এক নারী এগিয়ে এলো। তাড়াতাড়ি কাম শেষ কর মা। তোর কাম শেষ অইলে তয় না বাড়ি রওনা দিমু। মেয়েটির ছোট হাতে দ্রুত পাপড়ি ছিঁড়তে থাকে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আরিফা জানায়, সে তার মায়ের সঙ্গে সিগন্যালে ও ইডেন কলেজের সামনে ঘুরে ঘুরে গোলাপ ফুল বিক্রি করে। সারাদিন বিক্রি শেষ যে সব ফুল অবিক্রিত থেকে যায় সেগুলো যেন বিক্রি করা যায় সে জন্য ফুল থেকে পাপড়ি ছাড়িয়ে পানিতে ধুইয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করে। এক পলিথিন ব্যাগের এক ব্যাগ পাপড়ি ২০ টাকায় বিক্রি করে বলে জানায় আরিফা।
আরিফার মা জানায়, অল্প পুঁজিতে ফুল কিনে এনে মা ও মেয়ে দুজন মিলে বিক্রি করি। যেদিন ফুল অবিক্রিত থেকে যায় লোকসানের ভয়ে সেদিন রাত ১০/১১টা পর্যন্ত ফুল থেকে পাপড়ি ছাড়িয়ে তা বিক্রি করে তবেই বাড়ি ফিরে। এভাবেই মা ও মেয়ের জীবন কাটছে।
এমইউ/জেএইচ