স্বপ্নকে মরতে দেওয়া যাবে না


প্রকাশিত: ০৬:২৪ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৭

জীবনের ব্যর্থতাগুলো কখনই নারীদের মূল্যায়ন হতে পারে না। আর প্রত্যেকটি নারীকে ব্যর্থতায় নিমজ্জিত করার পেছনে থাকে একেকটি গল্প। আর সেই গল্প একজন পুরুষের স্বৈরাচারী আচরণ এবং শত বছরের একটি ধারণার উৎপাতকে ঘিরেই। মেয়েরা কেন এটা করবে? মেয়েরা কেন এটা ভাববে? পুরুষের দৃষ্টিতে এ ধরনের অপরিবর্তনশীল ভাবনাই মেয়েদের থামিয়ে দেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্যই ছেলেরা কখনও পরিবর্তন হতে পারে না, শত বছরের পুরনো ধারণাগুলোকে তারা আঁকড়ে ধরে রাখে। আর এ ধারণাগুলোর মূল উদ্দেশ্য একজন মেয়েকে দমিয়ে রাখা। আমি বলবো আসলে আমাদের দেশের পুরুষরা মানসিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। এদের সঠিক চিকিৎসা এবং মানসিক পরিচর্যার প্রয়োজন। চিরকাল মেয়েরা ছেলেদের চাইতে এগিয়ে। তারা নিজেদের পরিবর্তন চায়, চায় শত বছরের পুরনো ধারণাগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিতে। আর ছেলেরা সেই পুরনো ধারণাগুলোর কাছে চায় আশ্রয়।

এ সত্যকে সামনে রেখে প্রত্যেকটি মেয়েরই আরো দুর্বার গতিতে ছুটে চলা প্রয়োজন। প্রয়োজন অনাকাঙ্ক্ষিত এ শিকলকে ছুঁড়ে ফেলে শির দাঁড় করে কঠিনভাবে বাঁচতে শেখা।

তাই ভয়-ভীতি-শঙ্কা মুছে দিয়ে নিজেকে চিনতে হবে, স্বপ্নগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নিজের কথা ভাবলে কেবল চলবে না, নিজের সঙ্গে ভাবতে হবে আমাদের দেশের প্রত্যেকটি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তোমরা মেয়েরা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ পরিবেশে অানুকূল্যের মাঝে থেকে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অগ্রসর হও। নিজেকে পরিবর্তন করো আর সঙ্গে পরিবর্তন করো অন্তত একটি পুরুষের চোখকে। একটি পুরুষকে অন্তত বুঝিয়ে দাও, দেখিয়ে দাও তুমি একজন সর্বজয়া মানবী।

একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারের সর্বশেষ জরিপ বলছে, ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাদের নির্যাতনের কথা কখনই অন্যদের জানায় না। কথা হলো কি করে জানাবে? আর কেনইবা জানাবে? যেখানে মেয়েদের নিয়ে বছরের পর বছর শুধু জরিপ করে সংবাদের শিরোনাম বানিয়ে কিছু কর্মসূচির মাধ্যমেই দায়িত্ববোধ শেষ করা হয়। কারণ আমাদের মেয়েদের চোখে, মনে অনেক স্বপ্ন আছে, আছে এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার ইচ্ছাশক্তি। তবুও আমরা মার খাই, মরে যাই এবং বারবার জেগে উঠি।

আমাদের দেশের মেয়েদের সর্বপ্রথম সমস্যা আর্থিক দুর্বলতা। আমাদের দরকার সহজভাবে শিক্ষাগ্রহণের অধিকার। যে মেয়েরা সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীর নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে, আমাদের দরকার সেসব মেয়ের সন্তানদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে সহজভাবে কাজ করার একটি সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য অধিকার। তবেই মেয়েরা শঙ্কা কাটিয়ে বলতে পারবে তার প্রতি অত্যাচার এবং অন্যায়ের কথা। নিজেকে বলার জন্য বা তৈরি করার জন্য প্রথমে নির্ভরযোগ্য একটি ভীত প্রয়োজন। যে ভীত আমাদের দেশের মেয়েদের নেই!

আমাদের দেশের ছেলেরা বউদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ করে। তাদের মতে, তারা বউদের স্বামী, তারাই বউদের নিয়ন্ত্রণ করবে। অথচ এসব ছেলেই ঘরে বউ নিয়ন্ত্রণ করে বাহিরে গিয়ে নিজের কামনার দৃষ্টিভঙ্গিটি এতটা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে নিয়ে যায় যে, টক-ঝাল-মিষ্টি সব ছেঁকে দেখতে জলসা সাজিয়ে কীর্তণ শোনেন। আর এমন অসভ্য মানুষগুলোই আমার এবং আমাদের জন্য তৈরি করে নিয়ন্ত্রণমূলক সংবিধান! আমাদের প্রতি পুরুষশাসিত সমাজ থেকে যে স্বৈরাচারী আচরণ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা একদিনে সমাধানের বিষয় নয়। এটা বহু বছরের একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী ভাইরাসজনিত ক্রনিক! তাই আমাদের থেমে না থেকে হতাশ না হয়ে মরে গিয়ে গিয়ে লড়তে হবে বছরের পর বছর। ঠুকে ঠুকে ভাঙতে হবে দেয়ালের একেকটি ইট। প্রচুর ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে, আশাবাদী থাকতে হবে।

আশা এবং স্বপ্নকে কখনো মরতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে তুমি মরে যেও নারী; তবুও স্বপ্ন মেরো না। স্বপ্ন বেঁচে থাকলে একদিন ঠিক তুমি দেখতে পাবে এক চিলতে সোনাঝরা রৌদ্রময় উঠোন। যেখানে জেগে থাকবে বড় বড় সবুজ ঘাস শুধু তোমারি জন্য। সব প্রতিবাদ বা মাথা উঁচু করে রাখার জোর ভাঙন দিয়ে তৈরি হয় না। জীবনের সব জয়ের জন্য মেডেল প্রয়োজন হয় না। কিছু জয় আছে, চোখে দেখা যায় না, বোবা, ভাষাহীন। শুধু স্বপ্ন আর আশা রেখো, একদিন তোমার জয় ঠিক কথা বলবেই বলবে।

লেখক : কবি ও কথাশিল্পী

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।