শীতের রোদ মিষ্টি


প্রকাশিত: ১১:০৩ এএম, ০৯ জানুয়ারি ২০১৭

দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘একটি শীতের দৃশ্য’ কবিতায় শীতের রোদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন-
‘মায়া-মমতার মতো এখন শীতের রোদ
মাঠে শুয়ে আছে
আর কেউ নেই।’
মায়া-মমতাই বটে শীতের রোদ। বাংলার চলমান সৌন্দর্য আর ঋতু বদলের সময় যখন শীতের হাওয়া আমাদের গায়ে এসে লাগে, তখন একটুখানি উষ্ণতার জন্য আমরা কত কি-ই না করি।

শীত আসার আগেভাগেই মোটামোটা গরম কাপড় মার্কেটে আসতে শুরু করে। আমরা শীত তাড়াতে সেগুলো কিনে ফেলি। লেপ-কম্বলের নিচে দিনের অধিকাংশ সময় পার করে দেই। বেচারা শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শহরবাসী তো কোন ছাড়, গ্রামের মানুষেরা শীত আসার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। শীতে পিঠা-চিড়া বানাতে হবে, তার জন্য ধান, চাল, আটা মজুত করা শুরু হয়। প্রতি শীতের সকালে উঠে উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে পোহাতে হবে, তার জন্য শুকনো লাকড়ির জোগাড় করতে হয়। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ও শীতকে উপভোগ্য করতে আমরা অনেক কিছুই করে থাকি।

একটুখানি ঠান্ডা-ঠান্ডা আবহাওয়া দেখলেই মায়া-মমতার মত মিষ্টি রোদ পোহানো শুরু হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে যেখানে রোদ আসে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ। দুপুরে গোসলের পর একটু রোদে না দাঁড়ালে কেমন যেন কাঁপুনি লাগে আমাদের। তাই রোদের মিষ্টি আমেজ গায়ে মেখে শীতের সুখে মেতে উঠি।

আমরা শীতকালে হরহামেশাই দেখি, কেউ রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় যে পাশে রোদ থাকে; সেই পাশ দিয়েই হাঁটেন। মুঠোফোনে কথা বলতে রোদে দাঁড়াতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। রিকশায় কেউ কোথায় যাচ্ছেন, হুডটা না নামিয়ে বরং রোদ মাখাতে মাখাতে যেতেই ভালো লাগে।

শীতের সকালে চায়ের কাপ হাতে অনেককেই বারান্দায় বসে থাকতে দেখি একটু উষ্ণতার জন্য। কেউ কেউ পত্রিকা নিয়ে রোদে বসেন। গ্রামে দেখা যায়, লোকজন জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। মায়েরা তাদের সন্তানকে রোদে বসিয়ে রাখেন। দুপুরে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে তেল মেখে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শীতের এমন দৃশ্যের পেছনে কারণ একটাই, শীতের মিষ্টি রোদ থেকে উষ্ণতা আহরণের আকাঙ্ক্ষা।

শীতের এই মিষ্টি রোদ কি আসলেই মিষ্টি? না, শীতের এই উপভোগ্য রোদ শুধু উপকারীই নয় বরং ক্ষতিকর।
আমরা জানি, এমনিতেই রোদ ত্বকের অন্যতম শত্রু। রোদ ত্বককে পুড়িয়ে দেয়। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতের সময় রোদের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি। যদিও শীতের সময় রোদের প্রখরতা কম থাকে, কিন্তু বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মির (অতিবেগুনি রশ্মি) পরিমাণ বেশি থাকে।

শীতের সময় বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় আলট্রাভায়োলেট রশ্মি তুলনামূলক কম জলীয়বাষ্পের বাধা অতিক্রম করে ত্বকের সংস্পর্শে পৌঁছে। বছরের অন্যান্য সময় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় আলট্রাভায়োলেট রশ্মি জলীয়বাষ্পের বাধা অতিক্রম করে আসার ফলে এর তেজ অনেকটা কমে যায়। শীতে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি অনেকটা সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে। তাই শীতের রোদে ত্বকের ক্ষতিও বেশি হয়। ত্বক মলীন ও গাঢ় হয়ে যায়। কাজেই শীতের সময় রোদের মধ্যে বেশি থাকার জন্য ত্বকের ক্ষতি আরো বেশি হয়।

কবির শীতের রোদ মায়া-মমতার মত উষ্ণতায় আগলে রাখে শীতল জীবন। কিন্তু এই মায়া-মমতার পেছনে রাক্ষুসে রূপটাও দেখতে হবে। কারণ শীতকালের রোদের এই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এই রশ্মি থেকে ত্বককে যত দূরে রাখা যাবে, ততই মঙ্গল। ত্বকের সজীবতা ও হালকা বর্ণ ধরে রাখার জন্য শীতের সময় রোদ এড়িয়ে চলাই ভালো। শীতের রোদকে যতই আরামের মনে হোক না কেন, তা আসলেই ক্ষতি করছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।