হীরকখণ্ড কোহিনূর নিয়ে যত কাহিনি
যদি জিজ্ঞেস করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত হীরার নাম কী? অনেকে প্রথমেই উত্তর দেবেন কোহিনূর! একসময় যা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরা। অনেক ইতিহাসের সঙ্গে পুরাণকথারও সাক্ষী এই হীরকখণ্ড।
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত হীরা কোহিনূর। এই মূল্যবান হীরাটি মুঘল শাহজাদা, ইরানের যোদ্ধা, আফগান শাসক এবং পাঞ্জাবি মহারাজ, ব্রিটেনের রানির মুকুট ঘুরে স্থান পেয়েছে টাওয়ার অব লন্ডনে।
১৯ শতকে ১০৫ ক্যারেটের এই হীরাটা চলে যায় ব্রিটিশদের দখলে। ১৮৪৯ সালে কোহিনূর পাওয়ার পর এটি রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেন তৎকালীন লর্ড ডালহৌসি। শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের পর ডালহৌসি রাজকোষ থেকে কোহিনূর উদ্ধার করে রানি ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেন তিনি। জেনে নেয়া যাক কোহিনূরকে ঘিরে থাকা বেশ কিছু মিথ।
বলা হয়ে থাকে, কোহিনূর ভারতের সবচেয়ে দামি হীরা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ১০৫ ক্যারেটের হীরাটি যখন ব্রিটেনে পাচার করা হয় তখন এর বোনগোত্রীয় আরো দুটি হীরা ছিল। যেগুলো কোনো অংশে কোহিনূরের চেয়ে কম দামি নয়। ওই হীরা দু’টির নাম দরিয়া-ই নূর (বর্তমানে তেহরানে রয়েছে) ও গ্রেট মুঘল ডায়মন্ড।
গ্রেট মুঘল ডায়মন্ডের ওজন ২৪০ ক্যারেট। হীরকের ইতিহাসে এটি খুব প্রাচীন। অন্যদিকে দরিয়া-ই নূরের ওজন ১৮২ ক্যারেট। ইরানের বিখ্যাত সব ডায়মন্ডের মধ্যে এটি অন্যতম।
ধারণা করা হয়, কোহিনূর সবচেয়ে নিখুঁত ডায়মন্ড। তবে বাস্তবতা হচ্ছে- মুল কোহিনূর নিখুঁত ছিল না। রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স আলবার্ট এটিকে কেটে এর শেপ পরিবর্তন করেছিলেন।
এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার তালিকায় কোহিনূরের অবস্থান ৯০তম। পর্যটকরা লন্ডন টাওয়ারে বিখ্যাত এ হীরাটি দেখতে গেলে এর ছোট সাইজ দেখে বিস্মিত হন।
ভারতীয়দের অনেকেই মনে করেন, কোহিনূর হীরা প্রথমে পাওয়া যায় ১৩ শতকে অন্ধ্রপ্রদেশের কল্লুর খনি থেকে। বলা হয়ে থাকে, যখন হীরাটি পাওয়া যায় তখন তা ছিল ৭৯৩ ক্যারেটের বিশাল একটি হীরা। কেউ দাবি করেন, গোয়ালিয়রের খনি থেকে এসেছে কোহিনূর। তারপর হিরাটি কেটে ছোট করা হয়। তবে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব নয় যে, হীরাটির উৎপত্তিস্থল আসলে কোথায় ছিল।
অনেক সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, কোহিনূর হীরা দেবতা কৃষ্ণের কাছেও ছিল। এমনকি এটি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের হাতেও এসেছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। যদিও এসবের পক্ষে শক্ত কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
ভারতীয়দের অনেকে মনে করেন নাদির শাহ দিল্লি ও আগ্রা লুণ্ঠন করেন এবং ময়ূর সিংহাসনসহ কোহিনূর পারস্যে নিয়ে যান। অনেকের দাবি, ময়ূর সিংহাসন অর্পণ করার সময় মোহাম্মদ শাহ রঙ্গীলা তার পাগড়ির ভেতর কোহিনূর লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে তারই ঘনিষ্ঠ একজন নাদির শাহকে কোহিনূর লুকিয়ে রাখার অবস্থান জানিয়ে দেয়। পরে এটি তার দখলে চলে যায়।
অনেকেই মনে করেন, এটি ছিল মুঘলদের সবচেয়ে দামি সম্পদ। তবে ধারণাটি খুব একটি সঠিক নয়। মুঘল কোষাগারে দামি বস্তুগুলোর মধ্যে এটি একটি। তবে ঐতিহাসিক কারণে হাইলাইট হওয়ায় কোহিনূরের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া।
পানিপথের যুদ্ধের পর বাবরকে এ হীরা উপহার দেন পুত্র হুমায়ূন। সম্রাট বাবর হুমায়ুনের কাছে হীরাটি ফিরিয়ে দেন। তখন এর নাম ছিল ‘বাবরের হীরা।’
এসইউ/পিআর