জীবনে প্রথম ঢাকায় এসে হতাশ জামালউদ্দিন


প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

মঙ্গলবার, বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টা। কারওয়ান বাজারের পাঁচ তারকা হোটেলের বিপরীত দিকের রাস্তায় লম্বা একটি বাঁশে ঝুলানো ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির পতাকা হাতে আনমনে হাঁটছিলেন মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। হঠাৎ একটি প্রাইভেটকারের চালক হর্ন বাজাতেই চমকে উঠে  সামনে দৌড় দেন তিনি।

এ দৃশ্য দেখে কয়েকজন রিকশাচালক হাসতে হাসতে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, ‘কিরে ব্যাডা, শহরে কি নতুন নাকি?’

লোকটির চালচলন, হাঁটা-চলা ও এদিক-সেদিক তাকানো দেখে সহজেই অনুমান করা যায় তিনি এ রাস্তায় আগে কখনও আসেননি।

Jamalএ প্রতিবেদক কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে কথাবার্তা বলে জানতে পারেন ৩৫ বছর বয়সী জামালউদ্দিন নামের এই ব্যক্তি জীবনে প্রথমবারের মত ঢাকা শহরে এসেছেন। ফরিদপুরের শিবচর থানার বয়রা গ্রাম থেকে রোববার ঢাকায় এসেছেন তিনি। নিজ এলাকার লোকজনের সঙ্গে লালবাগের শহীদনগরে উঠেছেন।

আসন্ন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে পতাকা বিক্রি করে ভাল টাকা পয়সা রোজগারের আশায় চকবাজার থেকে বড় ও ছোট আকৃতির পতাকা ও বিজয় দিবস লেখা মাথার ব্যান্ড কিনে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বড় আকারের পতাকা ১৫০ টাকা ও ছোট পতাকা ও মাথার ব্যান্ড ২০/১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

জামালউদ্দিন জানান, ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট কিছুই চেনেন না। গ্রামে দিনমজুরি করতে বাড়ি ও ক্ষেত-খামারে যাওয়া পর্যন্তই ছিল তার চলাচলের গণ্ডি। কিন্তু গত দু’দিন ধরে সকাল সাড়ে ৮টায় জীবিকার সন্ধানে অচেনা রাজপথে বের হন। গ্রাম থেকে আসার সময় লোকেরা তাকে বলেছিল, বিজয় দিবসের আগে কয়েকদিন প্রচুর পতাকা বিক্রি হবে। লাভ অর্ধেকেরও বেশি। কিন্তু দু’দিনে মাত্র ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকার পতাকা বিক্রি হওয়ায় হতাশ তিনি। তিনি বলেন, কেউ বড় পতাকা কেনে না সবাই ছোট ছোট পতাকা কেনে।

তিনি জানান, গ্রামে দিনমজুরি করেও প্রতিদিন সাড়ে ৩শ’ টাকা মজুরি পেতেন। কিন্তু গত দু’দিনে যে বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে তিনবেলা খেয়ে গ্রামের সমান মজুরিও থাকবে না। এ কারণে আর ঢাকায় আর থাকতে চান না তিনি। ১৬ ডিসেম্বরের পর ফিরে যাবেন গ্রামে।

ঢাকা শহরের অচেনা রাস্তায় ঘুরে কিভাবে লালবাগের বাসায় ফেরেন? জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘রাতে যেখানেই থাকি মোবাইলে ভাই-বেরাদারদের বললে তারা এসে নিয়ে যায়।’

এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।