পথশিশুদের মজার ইশকুল

মাহবুবর রহমান সুমন
মাহবুবর রহমান সুমন মাহবুবর রহমান সুমন , ফিচার কন্ট্রিবিউটর
প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬

স্কুলের নাম ‘মজার ইশকুল’। এখানে যারা পড়তে আসে; তারা অন্যসব স্কুলের মত নিয়ম-কানুন মেনে চলে না। মেনে চলে না সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতিও। ব্যতিক্রমধর্মী এই স্কুলে শিক্ষা দেয়া হয় মজার ছলে। যারা শিক্ষা নেন তারা সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। এই স্কুলটি পূর্ণ করতে যাচ্ছে তাদের যাত্রার ৪ বছর। জাগো নিউজকে ৪ বছরের পথচলার গল্প শুনিয়েছেন প্রজেক্ট ইনচার্জ আরিয়ান আরিফ। মজার ইশকুলের কার্যক্রম ঘুরে এসে জানাচ্ছেন মাহবুবর রহমান সুমন।

যেভাবে শুরু
২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি আরিয়ান আরিফ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ঢাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তিনি ‘মজার ইশকুল’ নামের একটি স্কুল শুরু করতে চান। তার ৩ দিন পর ১০ জানুয়ারি ‘লিখতে চাই শুধু শিশু, মুছে দিতে চাই পথশিশু’ এমন স্বপ্ন নিয়ে বাংলা একাডেমির সামনে  ১৩ জন শিক্ষার্থী আর তিন তরুণ মিলে শুরু করেন মজার ইশকুলের কার্যক্রম। ১৩ জন শিক্ষার্থী দিয়ে শুরু করা সেই মজার ইশকুল এ পর্যন্ত পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি পথশিশুকে পড়িয়েছেন।

Mojar

যেভাবে চলছে
বর্তমানে মজার ইশকুল দুইভাবে পরিচালিত হয়। এজন্য রাজধানীর ৪টি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মজার ইশকুল’। এরমধ্যে আগারগাঁওয়ে সীমিত পরিসরে চলছে একটি স্থায়ী স্কুল আর সদরঘাট, কমলাপুর ও শাহবাগে রয়েছে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। আগারগাঁওয়ের স্কুলে সপ্তাহের ৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচলনা করা হয়। সদরঘাট, কমলাপুর ও শাহবাগের অনানুষ্ঠানিক স্কুলে সপ্তাহে ১ দিন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

মজার ইশকুল এখন কাজ করছে খাদ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি- এই তিনটি বিষয় নিয়ে। মজার ইশকুলের লাল-সবুজের টি-শার্ট পরা তরুণ-তরুণীরা পথশিশুদের শেখাচ্ছেন অক্ষরজ্ঞান, ছবি আঁকা, বর্ণপরিচয়, স্বাক্ষরতা, ছবি আঁকা, জাতীয় সংগীতসহ অনেক কিছু। মাদকাসক্ত শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষা শেষে শিশুদের দেয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে খাবার। অন্যদিকে যারা আগারগাঁওয়ের স্কুলে পড়েন তাদের দেয়া হচ্ছে সীমিত পরিসরে প্রযুক্তি জ্ঞান।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঝে মাঝে আয়োজন করা হচ্ছে মজার মজার ইভেন্টের। বর্তমানে মজার ইশকুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী ৪ শতাধিকের বেশি এবং সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে ৭ শতাধিকের বেশি তরুণ-তরুণী।

Mojar

যাদের অর্থায়নে
মজার ইশকুলের অর্থায়ন দুইভাবে হয়। স্কুলের নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতি মাসে প্রত্যেক ক্লাসের জন্য পঞ্চাশ টাকা ডোনেট করে থাকে। প্রধানত এই টাকা দিয়ে চলে মজার ইশকুলের কার্যক্রম। এছাড়া বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য ফেসবুকের মাধ্যমে শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেক অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া আগারগাঁওয়ের স্থায়ী স্কুলের জন্য বাটা ও স্পেন্সার চাইল্ড সিস্টেম সহযোগিতা দিয়ে থাকে। তবে যেকেউ চাইলে তাদের সহযোগিতা করতে পারেন।

হতাশার গল্প
২০১৫ সালে ১২ সেপ্টেম্বর এক দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় মজার ইশকুলকে। রামপুরার বনশ্রীতে তাদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ১০ শিশুকে ‘উদ্ধার’ দেখিয়ে ৪ উদ্যোক্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ফোরামে সোচ্চার হয়ে ওঠে মানুষ। পুলিশের তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় ৩৮ দিন পর তারা মুক্তি পান।

Mojar

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পথশিশুদের বড় কর্মকর্তা বানানোর কোন লক্ষ্য নেই। প্রত্যেকে যেন সম্মানজনক ভাবে জীবন-যাপন করতে পারে। পরিকল্পনা আছে- ভবিষ্যতে ঢাকার আশেপাশে একটি ভিলেজ তৈরি করার; যেসব শিশুদের থাকার জায়গা নেই তারা সেখানে থাকবে। তারা কাজ শিখে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা করা। তাছাড়া ৬ষ্ঠ বছর থেকে ঢাকার বাইরে, যেখান থেকে শিশুরা বেশি ঢাকায় আসে সেসব জায়গায় কাজ শুরু করার।

মজার ইশকুলের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরাও এখন স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হওয়ার। স্বপ্ন দেখে জীবন বদলানোর। এই স্বপ্নটা অনেকের কাছে বিলাসিতা মনে হলেও পরিবর্তন আসুক মানবতা, বিবেক আর সভ্যতার।

এসইউ/জেআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।