শিশুদের অধিকার ও প্রত্যাশা পূরণ জরুরি


প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

একটি শিশুকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই শিশুর পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯২৪ সালে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে ‘শিশু অধিকার’ ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ এই সনদে স্বাক্ষর করে। বর্তমান আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

শিশু অধিকার সনদে ৫৪টি ধারা এবং ১৩৭টি উপ-ধারা আছে। এই উপ-ধারাগুলোতে বলা হয়েছে, শিশুদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের বৈষম্য করা যাবে না। সমাজকল্যাণমূলক কাজ এবং আইনের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য হবে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ। রাষ্ট্রসমূহ শিশুদের পরিচর্যা ও সরকার শিশুদের সেবা এবং সুবিধাদি প্রদান করবে। শিশুদের মৌলিক অধিকার যেমন- শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি অধিকারগুলো নিশ্চিত করবে।

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। বিশ্বে শতকরা ২৬ ভাগ মানুষের বয়স ১৫ বছরের নিচে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু। তাদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ শিশুই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। একটি জরিপে দেখা যায়, দরিদ্র শিশুদের ৬৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিস্কাশন সুবিধা, ৫৯ শতাংশ তথ্য লাভের অধিকার, ৪১ শতাংশ বাসস্থান এবং ৩৫ শতাংশ বিশুদ্ধ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়।

‘বাংলাদেশে শিশুশ্রমের অবস্থান’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় শিশুশ্রমের কারণ হিসেবে যে কারণগুলো দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : চরম দারিদ্র্য, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যু, পিতৃবিয়োগ, বাবা-মা পরিত্যাজ্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।

শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও শিশু কল্যাণে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ, পুষ্টি, শিক্ষা ও বিনোদনের কোন বিকল্প নেই। তাই শিশু-কিশোর কল্যাণে জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী শিশু অধিকার সংরক্ষণ, শিশুর জীবন ও জীবিকা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনাসহ শিশু নির্যাতন বন্ধ, বিশেষ করে কন্যাশিশুদের বৈষম্য বিলোপ সাধনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শিশু স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা এবং শিশু কল্যাণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে গৃহীত হয়েছে ‘জাতীয় শিশু নীতি’। এছাড়া নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘পারিবারিক সহিংসতা আইন ২০১০’।

শিশুশ্রম নিরসনকল্পে ‘জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের বিরত রাখার জন্য শিশুশ্রম নিরসন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে আগামী তিন বছরে ৪০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে এনে তাদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। যাতে তারা পিতামাতাকে তাদের কাজে সহায়তা করতে পারে।

শিশুরা স্কুলের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে শ্রমিকের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে ২০১১ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০০৬ সালে এই জেলার নয়টি উপজেলায় স্কুলে যেতে ইচ্ছুক শিশুর সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ৭৩৪ জন। ২০১১ সালে এসে দেখা যায়, এদের মধ্যে থেকে ১৮ হাজার ১৬৮ জন শিশু ঝরে পড়েছে। ৯ উপজেলার হিসাব অনুযায়ী শুধু প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ঝরে পড়ার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ। আর এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশুই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

পারিবারিক অসচ্ছলতা কাটাতে শ্রমজীবী শিশুদের প্রচন্ড স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে হোসিয়ারি শিল্প কারখানার মতো ধূলিময় পরিবেশে কাজ করলে তাদের শ্বাসকষ্ট ও ব্রংকাইটিস রোগ হতে পারে। এছাড়া ওয়ার্কশপের মতো কারখানায় মেটাল ডাস্টের মধ্যে যদি শিশুরা কাজ করে তবে ফুসফুসের ক্যান্সারও হতে পারে।

২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১ থেকে ১৪ এবং ১৯৭৫ সালের শিশু আইনে বলা হয়েছে, শূন্য থেকে ১৬ বছরের শিশুদের ভারী কাজ করানো যাবে না। কিন্তু কোথাও এই আইন মানা হচ্ছে না।

শিশুরা বড় হবে, একদিন স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হবে। তারা শিক্ষিত হবে। জ্ঞান অর্জন করবে। মানবিক মূল্যবোধ বাড়বে। তখন একটা পরিবর্তন হয়তো আসতে পারে। আইনে বলা আছে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাই শিশু। তাহলে ১৮ বছরের আগে কাউকে কাজে নিয়োগ করা বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তবেই হয়তো একদিন আমাদের সমাজ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব হবে।-বাসস

আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।