অপুষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিশুর বিকাশ


প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ফাইল ফটো

অপুষ্টির কারণে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের। স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতি হলেও পুষ্টি পূরণের ক্ষেত্রে এখনও দেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুষ্টির অভাবে শূন্য থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে শতকরা ৩৮ দশমিক ৭ ভাগ ছোট আকৃতির, ৩৫ দশমিক ১ ভাগ কম ওজনের এবং ১৬ দশমিক ৩ ভাগ শিশুর আকৃতি ছোট হচ্ছে।

সম্প্রতি এক বৈঠকে পুষ্টি ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা পুষ্টিক্ষেত্রে দেশের সার্বিক এ চিত্র তুলে ধরতে এসব পরিসংখ্যান জানানো হয়। পরিসংখ্যানে জানা যায়, পুষ্টির অভাবে শিশুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ও অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কায় বেশি থাকে। রক্তস্বল্পতাসহ নানা রোগেও আক্রান্ত হয়ে থাকে।

পুষ্টি ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপুষ্টির শিকার মা ও শিশুর সংখ্যা আগের তুলনায় কমলেও তা খুব বেশি ইতিবাচক নয়। পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ভাতের ওপর চাপ কমবে এবং শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপুষ্টির প্রধান কারণ জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও জনসচেতনতার অভাব। দরিদ্র পরিবারে খাদ্যের সহজলভ্যতা না থাকার সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছল ও অবস্থাপন্ন পরিবারেও শিশুদের অপুষ্টির শিকার হতে দেখা যাচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার না দিয়ে শিশুদের আবদার মেটাতে পানীয়, জুস ও চিপস দিচ্ছে। জাঙ্ক ফুডের কারণেও শিশুদের শরীরে ক্ষতি হচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা কম খেতে দেয়াও অপুষ্টির কারণ। বয়স অনুপাতে কতোটুকু খাবার, কী খাবার, কতক্ষণ পর খাবে, তা অনেক মা-বাবা বুঝতে পারেন না। অপুষ্টি দূর করতে শিশুর সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটা শুধু শিশুই নয়, কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষের জন্যও প্রযোজ্য।

তারা আরো বলেন, রক্তস্বল্পতা, ঠোঁটের কোণায় ঘা, পেটের অসুখ, চোখের নানা সমস্যা, চর্মরোগ, আমাশয়, চুলপড়া, পেটে কৃমি, শারীরিক গঠন সঠিক না হওয়া ও স্নাযুতন্ত্রে বিকাশ ব্যাহত ইত্যাদি অপুষ্টির কারণে হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন, বেশি দুধ ও মাংস খেলে স্বাস্থ্য ভাল হয়। কিন্তু তা নয়, শিশুসহ প্রতিটি মানুষের বয়স অনুপাতে মিশ্র খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। সে জন্য মাংস ও দুধের সঙ্গে মাছ, ডিম, ডাল, ভাত, সবজি, ফলমূল খেতে হবে।

সম্প্রতি সাউথ এশিয়া ফুড এন্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (এসএএফএএনসিআই)-এর তথ্যপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অপুষ্টির হার ১৯৯০ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ওজন স্বল্পতার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেহেতু নারী ও ছোট শিশুরা বেশি অপুষ্টির শিকার হয়, সেহেতু মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলাভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে, ছোট জাতের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি, এবং পুষ্টিমান বাড়াতে এ গবেষণায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা, পুষ্টিশিক্ষা এবং শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠতে সহায়তা করতে মা-বাবা’র সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ জন্য হাসপাতাল ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। দৈনন্দিন খাবারে যথেষ্ট অণুপুষ্টি না পেলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়। ফলে তাদের পক্ষে স্কুলে শেখা এবং পরবর্তীতে কর্মজীবনেও ভাল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের ক্ষতি অপূরণীয়। অপুষ্টির শিকার যারা তাদেরসহ অন্যান্যদের এ বিষয়ে আরো অধিক মনোযোগি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

ইউনিসেফের এক জরিপ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৬০ ভাগ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। খাদ্য ঘাটতির কারণে কম বয়সী শিশুদের শতকরা ৪৭ ভাগ শিশুই মারাত্মক স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। এর মধ্যে রক্তস্বল্পতা একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

চিকিৎসকদের মতে, অপুষ্টি একটি মারাত্মক জনসমস্যা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কোন খাবারে কি পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে সে সম্পর্কে অভিভাবকদের সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। সমাজে কিছু সমস্যা রয়েছে, যা শিশু অপুষ্টির কারণ, তা হলো মাতৃদুগ্ধের বিকল্প খাদ্যের ব্যবহার। নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমেও বিকল্প এ মাতৃদুগ্ধ মা’র হাতে পৌঁছে থাকে।

এদিকে, মাতৃত্বকালীন ভাতার অর্থ থেকে পুষ্টিকর খাবারের সুবিধা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর থেকে এ ভাতা চালু করে। মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় একজন দুস্থ গর্ভবতী নারী পাচ্ছেন ৩শ’ টাকা করে মাসিক ভাতা। এ ভাতা ২৪ মাস পর্যন্ত বরাদ্দ থাকে। মূলত মা ও শিশুর পুষ্টিজনিত অভাব মেটাতে সরকার এ কর্মসূচি চালু করেছে।

বিডিএইচএসের সর্বশেষ এক জরিপে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশে কম ওজনের শিশু ছিল শতকরা ৩৬ ভাগ। অর্থাৎ এই শিশুরা আড়াই কেজির কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।

২০১১-১২ সালে জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাতীয় অনুপুষ্টি সমীক্ষা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, ৯ থেকে ১৪ বছরের কিশোরী মেয়েরা আয়রন (লৌহ জাতীয়) খাবার প্রয়োজনের তুলনায় ২০ শতাংশ কম খায়। শতকরা ১০ ভাগ মাছ ও মাংস খেতে পায়। এ সমস্যা কিশোর-কিশোরী উভয়ের। -বাসস

আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।