হিমালয় কন্যা তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের পদচারণা বাড়ছে
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের পদচারণা ক্রমেই বেড়ে চলছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমের শেষে এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। এবার হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটকদের উপস্থিতি খানিকটা কম।
প্রতিবছর এসময় তুলনামূলকভাবে শীত কম থাকায় কেউ যান বেড়াতে আবার কেউবা যান পিকনিক উপলক্ষে। গত বছরও এ সময় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৮০টি পিকনিকের গাড়ি তেঁতুলিয়ায় যেত। সারাদিন প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করে দুপুরের রান্না করা খাবার খেয়ে বিকেলে চলে যেত নিড়ের উদ্দেশ্যে।
রংপুরের ভিন্নজগত আর দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীর মত তেঁতুলিয়ায় বড় ধরনের পিকনিক স্পট না থাকায় এখানকার ডাকবাংলো সংলগ্ন পিকনিক কর্ণারই সব বয়সী মানুষের আনন্দের ঠিকানা। গান বাজিয়ে, নেচে গেয়ে পর্যটকরা উপভোগ করেন সারাটি দিন। কিন্তু এবার পিকনিক কর্নারে কোলাহল কম, কারণ-হরতাল ও অবরোধের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা।
খালি চোখে হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার একমাত্র উপযুক্ত স্থান তেঁতুলিয়া। মেঘমুক্ত আকাশে শীতের সকালের সোনা রোদ যখন হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে পড়ে, তখন এই অনাবিল দৃশ্য দেখে জুড়িয়ে যায় দু`চোখ। শুধু হিমালয় নয়, বাড়তি পাওয়া হিসেবে ভারতের কাঞ্চনজংঘা পাহাড়ও দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীণ বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। খালি চোখেই এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর উত্তর পাশে দাঁড়িয়ে এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে ওখানে ছুটে চলেন অনেকেই।
এছাড়াও রয়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। যেখান দিয়ে ভারত ও নেপালের সাথে পণ্য আনা-নেয়া হয়। দিনভর শ্রমিকরা ব্যস্ত থাকেন মালামাল লোড-আনলোডে। আছে জেমকল লিমিটেডের কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট। রওশনপুরে রয়েছে তাদের সুন্দর সুন্দর কিছু অবকাঠামো। যা দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগে। সিলেটের মত বড় বড় চা বাগান না থাকলেও এখানে চোখে পড়বে ছোট ছোট অনেক চা বাগান।
সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করবে মহানন্দা নদীর কোল ঘেঁষে উঁচু টিলায় অবস্থিত তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক ডাকবাংলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নজরে আসবে শ্রমিকরা নদী থেকে পাথর তুলছে। নদীর মাঝখানে রয়েছে দুই দেশের সীমানা। নদীর ওপারেই ভারত। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে ভারতের পল্লী এলাকার দৃশ্য চোখের সামনে ভাসবে। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাশ দিয়ে তৈরী করা সড়কে বিএসএফের টহল দেখা যাবে সব সময়। এছাড়া সেখান থেকে পঞ্চগড়ে ফিরে দেখা যাবে ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা। সদর উপজেলার ভিতরগড় এলাকায় প্রাচীন পৃত্থু রাজার রাজধানী ও মহারাজার দিঘী। সেখানে এখন খনন কাজ হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুসনে জাহানের তত্ত্বাবধানে। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের কাজ চলছে। আরো দেখা যাবে আটোয়ারী উপজেলায় কয়েকশ’ বছরের পুরোনো মির্জাপুর শাহী মসজিদ, ইমামবাড়া, বার আউলিয়ার মাজার, দেবীগঞ্জের বোদেশ্বরী মন্দির।
ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৪৫৭ কিলোমিটার। আর পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধা ১৭ কিলোমিটার। পঞ্চগড় থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। আর বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফের দূরত্ব ১০২১ কিলোমিটার।
দেশের যে কোন স্থান থেকে সড়ক ও রেলপথে যাওয়া যায় সেখানে। বিমানে করেও পঞ্চগড় আসতে পারেন। ঢাকা থেকে ভাল মানের বাস পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দিবা-রাত্রি চলাচল করে। ঢাকা থেকে রেল পথেও পঞ্চগড় যাওয়া যায়। আকাশ পথে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে বিমান চলাচল করে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স নিয়মিতভাবে ঢাকা-সৈয়দপুর ও সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে।
তেঁতুলিয়া বেড়াতে যেতে হলে পঞ্চগড় শহরে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই যেতে হবে। কারণ তেঁতুলিয়ায় থাকার মত তেমন কোন আবাসিক হোটেল নেই। তবে পূর্বানুমতি নিয়ে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে রাত্রিযাপন করা যায়। এ জন্য আগে ভাগেই সিট বুক করতে হবে।
এ ছাড়া জেলা পরিষদের একটি বাংলো রয়েছে। এখানে থাকতেও আগাম বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। তবে শীত মৌসুমে এগুলোতে সিট পাওয়া খুবই কঠিন। রাতযাপনের জন্য পঞ্চগড় জেলা শহরে ভাল মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস রয়েছে। এসি, নন-এসি দু’ধরনের রুমই পাওয়া যায়। ভাড়াও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
আরএস