‘নদীতে যে কত মানুষ মরতে দেখেছি তার হিসাব নাই’


প্রকাশিত: ০৬:১৭ এএম, ২৫ আগস্ট ২০১৬

‘এই ঘাটে ২৫ বছরের জীবনে কত মানুষকে যে মরতে দেখেছি, তার কোনো হিসাব নাই। পিনাক-৬ লঞ্চ তো আমগো চোখের সামনেই ডুবলো। তিনশ মানুষ একসঙ্গে মারা গেল। আরো অনেক ছোটখাটো লঞ্চ ও স্পিডবোট উল্টে কত মানুষ যে মরতে দেখেছি তার কোন হিসাব নাই।’

মাওয়া ঘাটের ট্রলারচালক খোকন বিভিন্ন লঞ্চ ও স্পিডবোট দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, প্রায়ই পদ্মায় স্পিডবোট উল্টে পানিতে ডুবে যায়। কত মানুষ যে মারা যায় তার কোনো হিসাব নেই। আবহাওয়া যখন খারাপ থাকে তখনও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। ফলে বেশি করে মানুষ মারা যায়। কেউ নিজের জীবনের কথা ভাবে না, সবাই তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যেতে চায়।

Khokon

পিনাক-৬ লঞ্চ থেকে অনেক যাত্রীকে তার ট্রলার দিয়ে উদ্ধার করেছেন জানিয়ে বলেন, প্রতিনিয়ত নদী পার হতে গিয়ে যারা মারা যায় তাদের বেশির ভাগের লাশও পাওয়া যায় না। অনেক পরিবার হয়তো জানেও না যে তার স্বজন নদীতে ডুবে মারা গেছেন।

আহতদের উদ্ধারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কত লোকরে উদ্ধার করছি তার হিসাব নাই। তবে কেউ পরে এসে আর খবর নেয় না। কোস্টগার্ড এক্ষেত্রে আহতদের চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা করে বলেও জানান খোকন।’

পরিবারে কে কে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। মেঝটাকে কাজ শিখাচ্ছি। আর ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। মেয়েও পড়ালেখার মধ্যে আছে বলেও জানান তিনি।

খারাপ আবহাওয়ায়ও কি যাত্রীরা স্পিডবোটে নদী পার হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে শুনে কার কথা। পুলিশ কত বাধা দেয় কিন্তু শুনে না কেউ। লঞ্চ যখন ছেড়ে যায় তখন অন্ধকারে পালিয়ে থাকে স্পিডবোট চালকরা। কিছুদূর গেলেই লঞ্চের সঙ্গে স্পিডবোট লাগিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যায় তারা।

সময় বাঁচাতে বিপদের কথা কেউ চিন্তা করে না উল্লেখ করে খোকন বলেন, লঞ্চে নদী পার হতে সোয়া এক ঘণ্টা লাগে কিন্তু স্পিডবোটে লাগে মাত্র ২০ মিনিট। তাই আবহাওয়া খারাপ হলেও অনেক যাত্রী স্পিডবোট দিয়ে নদী পার হয়।

মাওয়া ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক জামশেদ জানান, সন্ধ্যার পর আমরা স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেই। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই স্পিডবোট চালায়। এক্ষেত্রে যাত্রীদেরও অনেক দোষ আছে বলেও জানান তিনি।

দুর্ঘটনা ঘটলে অনেকেই পুলিশকে জানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মাত্র দুটি দুর্ঘটনার কথা আমি জানি। তবে এর চেয়ে বেশি ঘটনা ঘটতেও পারে। নিজেরা ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে অনেক দুর্ঘটনার কথা পুলিশকে জানায় না চালকরা।

এমএম/এআরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।