২৫ মার্চ: বাঙালির জীবনে এক কালো অধ্যায়

সানজানা রহমান যুথী
আজকের এই দিনটি বাঙালিদের কাছে কালরাত হিসেবে পরিচিত। এই দিনেই আমারা হারিয়েছি হাজারো মানুষকে। বাঙালিদের জন্য দিনটি কখনোই ভুলবার নয়। যতই আমরা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি ততই আমাদের সামনে এই ঐতিহাসিক কালরাত্রির প্রতিচ্ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালিদের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে সরিয়ে নিতে একটি নীল নকশা তৈরি করেন। সেই নীল নকশার ফলাফলই হলো ২৫ মার্চ রাতে বাঙালিদের ওপর নেক্কার জনক গণহত্যায় ঝাপিয়ে পড়া। যা অপারেশন সার্চ লাইট অভিযান নামে পরিচিত। পাকিস্তানি বাহিনী সারাদেশে তাদের এই অভিযান পরিচালনা করেন। এই গণহত্যায় ইয়াহিয়া খান, রাও ফরমান আলী, জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম রাজা গণহত্যায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করেন।
ইয়াহিয়া খান তাদের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। রাও ফরমান আলীর কাজ ছিল রাত ১১ টায় ঢাকায় কারফিউ জারি করা, টেলিফোন, টেলিগ্ৰাফ, রেডিও স্টেশন ও সকল প্রকার পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া। এছাড়াও ঢাকা শহরের সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া ও টহল জারি করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিয়ার সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ধ্বংস ও পরাভূত করা এবং ২, ১০ ইপিয়ারকে নিরস্ত্র করা। এসময় তারা ঢাকার প্রধান প্রধান শহরগুলোতে হামলার পরিকল্পনা চালায়।
এদিন মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানী সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। ইতিহাসের এই ভয়াল রাতে ছাত্র-শিক্ষক, রাজনৈতিক শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীসহ নাম না জানা সাধারণ জনসাধারণকে নির্মমভাবে কাপুরুষের মত নিরস্ত্র মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়।
বিগত ২৩ বছরের শোষন হতে মুক্তি পেতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর বাঙালি জাতি আরও সোচ্চার হয়ে ওঠে। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। এই মুক্তিকামী মানুষকে দমন করতেই মূলত পাকিস্তান সরকার এই ভয়াবহ গণহত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের এই নেক্কারজনক হামলায় নারী-শিশু, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি। সে রাতে হাজারো মা-বোন হয়েছেন ধর্ষণের শিকার। সরকারি তথ্যমতে শুধু ঢাকাতেই ২৫ মার্চ রাতে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। যা বাঙালি জাতির জীবনের এক কালো অধ্যায়।
এই শহীদদের স্মরণেই মূলত কালরাত পালন করা হয়। ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ওই দিন থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শহীদদের স্মরণে আজ রাত ১০:৩০ থেকে ১০:৩১ ( এক মিনিট)সারাদেশে ( কপিআই/ জরুরি স্থাপনা ব্যতিত) প্রতীকী ব্লাক আউট পালন করা হবে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এই রাতে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা করা হবে না। এছাড়াও ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
আমরা বাঙালি জাতি ঋণী এই শহীদদের কাছে। যাদের মৃত্যু বাঙালিদের আরও সোচ্চার করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে। যার কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়েছে। এই কালোরাতকে স্মরণে রেখেই দেশের সবস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন।
কেএসকে/জিকেএস