পথশিশুদের অনিশ্চিত জীবন!
জীবন বড়ই বিচিত্র। এই বিচিত্র জীবনে নানা ধরনের চিত্র দেখা যায়। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মিলানো সত্যিই কঠিন। সমাজের বিভিন্ন স্তরে বাস করে নানান শ্রেণিপেশার মানুষ। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে বাস্তুভিটাহীন রাস্তার পথের মানুষ। যাদের জীবনে সুখ শব্দটির নিশ্চয়তা কেউ দিতে না পারলেও এর বিপরীত অর্থের নিশ্চয়তার সার্টিফিকেট সবাই দিতে পারে।
সেই সব সর্বহারা মানুষের কোলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জেনেও জন্মগ্রহণ করে হাজার হাজার ঝরাফুল। নিয়তি তাদের কলি হয়ে পরিস্ফুটনের আগেই ঝরে যেতে বাধ্য করে। শৈশব, কৈশরসহ ব্যাক্তি জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত নগরের বাসিন্দা হিসেবে। ব্যাস্ত নগরীর কোনো এক সস্তা অন্ধকারময় গলিতে গাদাগাদি করে তাদের বসবাস করতে দেখা যায়।
মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করা তো দূরের কথা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো কী কী তাও হয়তো জানে না। তারা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। আলোকিত এই ধরণীতে দরিদ্রতা নামের ভারি বোঝা মাথায় নিয়ে নিত্যদিন বয়ে চলেছে এই পথশিশু নামের আলো বঞ্চিত সোনামুখগুলো।
পৃথিবীর বুকে রোজই সূর্যের সোনালি আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ে। অথচ এই হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে জন্ম নেয়া পথশিশুদের পৃথিবী ধূসর অন্ধকারময়। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা দারিদ্র্যের কষাঘাতে হীনম্মন্যতায় ভোগে। জীবনকে নিশ্চিত করতে বেছে নেয় অনিশ্চিত কোনো পেশা। অন্ধকারময় গলি থেকে ভিক্ষাবৃত্তি, টোকাইসহ নানা ধরনের পেশায় জড়িয়ে পড়ে।
পথশিশুদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় এ সমাজের উচুস্তরের মানুষের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্টাংশ কুড়িয়ে খেতে দেখা যায়। সত্যিই সেই দৃশ্য বড়ই বেদনাদায়ক ও করুণ। এই অধিকারবঞ্চিত পথশিশুরা অপেক্ষায় থাকে- এ সমাজের কেউ একজন হয়তো তাদের হাতটি ধরে সাথে নিয়ে দু’মুঠো ভাত আর একটু সহানুভূতি দেখাবে। এ সমাজের আলোকিত মানুষেরা কিছুটা হলেও আলো বিনিময় করে সভ্যতা সঞ্চার করবে।
কিন্তু সমাজে আমাদের মত বিত্তবানদের টাকা পয়সা বাড়ি, গাড়ি, বিলাস সামগ্রীর অভাব না থাকলেও অভাব থেকে গেছে অনুভূতির জায়গাটায়। এ শূন্য জায়গাটাকে আমরাই ভরিয়ে দিতে পারি। একটু সহানুভূতি জোগান দিতে পারলেই কোনো শিশুকে এভাবে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হবে না। বেঁচে থাকার তাগিদে জীবনকে ঠেলে দিতে হবে না কোন অনিশ্চিত পথে। চলুন সামান্য হলেও নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে আমরা তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। কিছুটা হলেও আলো বিতরণ করতে চেষ্টা করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা।
এসইউ/এমএস