অনলাইনেই মাসে পাঁচ লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি করেন নিকিতা

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০২৪

যশোরের মেয়ে নাশিদ নিকিতা, পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকেই শেষ করেছেন বিবিএ ও এমবিএ। পড়াশোনা শেষ করেই পেয়েছেন ঢাকার একটি প্রসিদ্ধ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি। শুধু তাই না, নিকিতা পাশাপাশি শুরু করে অনলাইনে জামদানি শাড়ির ব্যবসা। মাত্র চার বছরের উদ্যোক্তা জীবনে তিনি হয়েছে সফল। কোনো শো রুম না থাকলেও, ঘরে বসে অনলাইনে মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি করেন তিনি।

নাশিদ নিকিতার এই চমকপ্রদ সাফল্য ও সাহসী পথচলার গল্প নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্প শুনতে চাই—
নাশিদ নিকিতা: চাকরি, ব্যক্তিগত জীবন সবকিছু মিলিয়ে দিব্যি কেটে যাচ্ছিল সময়। ২০২০ সালে কোভিডের সময় হঠাৎ একদিন জয়েন হলাম ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপে। সেখানে দেখলাম অন্য এক দুনিয়া। যেন উদ্যোক্তাদের মেলা। গ্রুপের সবার পোস্ট পড়তে পড়তে বুঝতে শুরু করলাম মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা আশার আলো উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকলো।

সেই আশাই যেন আমাকে বললো, ‘তুমিও পারবে-নতুনভাবে কিছু শুরু করা যাক’ কিন্তু আমার এতো সময় কোথায়? চাকরি করে এসব অনেক ঝামেলার কাজ। আমি কি পারবো? আমি অবশ্য হুজুগে বাঙালি টাইপের নই। কিছু দেখলাম আর নিজেই শুরু করে দিলাম এসব আমার দ্বারা হবে না। আমি অনেক প্রাকটিক্যাল চিন্তা করি, এরপর নিজের মতো একটি প্ল্যান সেট করে নিজের একটা পেজ খুলে উদ্যোক্তা হলাম। এভাবেই শুরু।

জাগো নিউজ: এগিয়ে চলার গল্পটা যদি বলতেন।
নাশিদ নিকিতা: কী কী সমস্যা আসতে পারে, তার তালিকা প্রথমেই তৈরি করলাম। সময়ও ভাগ করে নিলাম, এরপর এলো ইনভেস্টমেন্টের পালা। সিদ্ধান্ত নিলাম কম টাকা ইনভেস্ট করবো, সবার রেসপন্স দেখবো। বাকিটা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব।এরপর ২০২০ সালের জুন মাসের ৬ তারিখে কারিগর খুঁজে মাত্র ৮ হাজার টাকার অল্প কয়েকটি শাড়ি বানিয়ে আনলাম। সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুকে খুলে ফেললাম ‘কাব্য কন্যা’ নামে একটি পেজ।

বিচিত্র-খবর, উদ্যোক্তা, সাফল্য, সাক্ষাৎকার

জাগো নিউজ: কোনো রকম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছিল?
নাশিদ নিকিতা: শাড়ি বানিয়ে আনার পর চিন্তা হতে লাগলো, এ শাড়ি প্রমোট করব কীভাবে? এতো বিক্রেতার ভিড়ে আমাকেতো কেউ চেনে না। তাই ঠিক করলাম, নিজের ব্র্যান্ডি নিজেই করব। নিজের শাড়ির মডেল নিজেই হব। এছাড়া আর তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিলো না।

জাগো নিউজ: এখন কি নিয়ে কাজ করছেন?
নাশিদ নিকিতা: আমার উদ্যোগ কাব্য কন্যার বয়স চার বছর হয়ে গেছে। প্রথম দিকে শুরু করেছিলাম শুধু জামদানি দিয়ে। বর্তমানে জামদানির পাশাপাশি সিল্ক, বাটিক, পার্টি শাড়িসহ সব ধরনের শাড়ি নিয়ে কাজ করছি।

জাগো নিউজ: শো-রুম নেই, শুধু অনলাইনেই মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি, কীভাবে?
নাশিদ নিকিতা: আমার ব্যবসার পুরোটাই অনলাইনভিত্তিক। প্রতিমাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মতো আমাদের সেল হয়। অনেক সময় আর ধৈর্য নিয়ে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমাদের প্রোডাক্টের মান এবং সুন্দর উপস্থাপনার জন্যই আমাদের কাস্টমাররা সবসময় কাব্যকন্যাকে ভরসার জায়গায় রাখে। তাই আমার কাছে ক্রেতাদের বিশ্বাসের জায়গাটাই মূখ্য।

বিচিত্র-খবর, উদ্যোক্তা, সাফল্য, সাক্ষাৎকার

জাগো নিউজ: অনুপ্রেরণায় কে ছিলেন?
নাশিদ নিকিতা: অনুপ্রেরণায় ছিলেন, আমার পরিবার। পরিবারের সবাই আমাকে ভালোভাবে সাপোর্ট করেছেন, উৎসাহ জুগিয়েছেন। এছাড়াও অনলাইনে নারী উদ্যোক্তারাও আমার অনুপ্রেরণায় ছিলেন। তাদের কঠোর পরিশ্রম দেখেই আমি ঠিক করেছি যে আমিও করতে পারব।

জাগো নিউজ: উদ্যোগ নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?
নাশিদ নিকিতা: যেহেতু আমার এখনো কোনো অফলাইন শোরুম নাই। তাই ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে শো-রুম দেওয়ার। আমি চাই প্রতিটি জেলায় কাব্য কন্যার একটা করে শো-রুম রাখতে। এছাড়া আমি যেহেতু নারী উদ্যোক্তা তাই আমি চাই আমার প্রত্যেকটা শো-রুমে নারী উদ্যোক্তা কিংবা নারীদের নিয়ে কাজ করতে। যেনো আমি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।