৫০০ বছরেও যে বই পাঠোদ্ধার করতে পারেনি কেউ

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই মানুষ আবিষ্কার করেছে। যা থেকে জানা গেছে অতীত সম্পর্কে। বিশেষ করে পাণ্ডুলিপি, বিভিন্ন সময়ের পাণ্ডুলিপিগুলো আবিষ্কারের পর তা থেকে বর্তমান এবং অতীত সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এমন কিছু পাণ্ডুলিপি বা বই আছে যেগুলো শত শত বছর আগে আবিষ্কার হলেও তা পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এমনই একটি বই হচ্ছে ভয়নেচ পান্ডুলিপি। ১৯১২ সালে এই বইটি পোল্যান্ডের এক বই বিক্রেতার কাছ থেকে ব্যবসায়ী উইলফ্রিড ভয়নেচ থেকে কেনেন। তারপর থেকেই বইটি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়। এই বইটির বর্তমান নামও শেষ মালিক ভয়নেচের নামে।

কার্বন ডেটিংয়ে জানা যায় বইটি ১৫ শতকের সম্রাট রুডলফ ২য়- এর সময়কালের। বইটির শব্দগুলো দেখে অনেকেই ধারণা করেন এটি ইতালির কোনো ভাষা হতে পারে। বইটিতে মোট ২৩৫টি পাতা, ৩৮,০০০ শব্দ রয়েছে, তবে বেশ কয়েকটি পাতা হারিয়ে গিয়েছে।

বইয়ের লেখাগুলো বাম থেকে শুরু হয়ে ডানে গেছে। বইটি সুন্দর হরফের লেখায় ভরা। পাতায় পাতায় ছবি। কিন্তু এত সুন্দর বইটি কেউ কোনোদিন পড়তেই পারেননি। বইয়ের কিছু পৃষ্ঠায় দেখা যায় নানান ধরনের গাছপালা, পাতার ছবি আঁকা এবং নিচে কিছু লেখা।

আবার কিছু পৃষ্ঠায় কিছু নগ্ন নারীদের ছবি। কোথাও হয়তো তারা বাথটব ভর্তি সবুজ কোনো তরলে ডুবে আছেন, কোথাও আবার তারা কিছু বলছেন একে, অপরকে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কিছু লেখাও রয়েছে। তবে কি লেখা আছে, কোন ভাষায় তা কেউ এখন পর্যন্ত পাঠোদ্ধার করতে পারেননি।

পাণ্ডুলিপির বিভিন্ন অংশের নমুনা নিয়ে ২০০৯ সালে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেডিওকার্বন করা হয়। ফলাফল থেকে ধারণা করা হয় ১৪০৪ এবং ১৪৩৮ সালের মধ্যে কোনো এক সময়ে লেখা। বইটি বাঁধাই কর হয়েছে বাছুরের চামড়া দিয়ে। অন্তত চৌদ্দ থেকে পনেরটি বাছুরের চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ণ বইটি লিখতে। কিছু কিছু জায়গায় বাছুরের মাংসও লেগে আছে চামড়ার সঙ্গে।

বইটি লেখা হয়েছে কুইল কলম দিয়ে। লোহার পিত্ত কালি ব্যবহার করা হয়েছিল। অঙ্কন, টেক্সট এবং পৃষ্ঠা এবং ক্যুয়ার নম্বরের কালিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন, লোহা, সালফার, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়া তামা এবং জিঙ্কের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে এতে। যখন এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন (এক্সআরডি) পরীক্ষা করা নমুনাগুলোর একটিতে পটাসিয়াম সীসা অক্সাইড, পটাসিয়াম হাইড্রোজেন সালফেট এবং সিনজেনাইট শনাক্ত করেছে।

ধারণা করা হয় বইটিতে ব্যবহৃত কপার অক্সাইড কাপ্রাইটের সামান্য চিহ্ন সহ নীল রংটি গ্রাউন্ড অ্যাজুরাইট বলে প্রমাণিত হয়েছে । সাদা রং সম্ভবত ডিম-সাদা এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মিশ্রণ। সবুজ রং অস্থায়ীভাবে তামা এবং তামা- ক্লোরিন রেসিনেট দ্বারা চিহ্নিত করা হয়; স্ফটিক উপাদান হতে পারে অ্যাটাকামাইট বা অন্য কোনো তামা-ক্লোরিন যৌগ। লাল-বাদামী পেইন্টের বিশ্লেষণে ক্রিস্টাল ফেজ হেমাটাইট এবং আয়রন সালফাইড সহ একটি লাল গেরুয়া নির্দেশ করে। লাল-বাদামী রঙে সামান্য পরিমাণে সীসা সালফাইড এবং পামিয়েরাইট সম্ভবত উপস্থিত রয়েছে।

বইটির বিষয় জানা যায়নি। বইয়ের বেশির ভাগই ছবিতে ভরা। ধারণা করা হয়, জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত, জীববিজ্ঞানসংক্রান্ত, মহাজাগতিক, ফার্মাকোলজিকাল এবং সেই সময়ের ভেষজ গাছ-পালা হয়তো বা বইটির বিষয়বস্তু। হয়তো কিছু রেসিপিও লেখা হয়েছে।

বইটির ইতিহাস নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কির্চারের কাছে মার্সির ১৬৬৫/১৬৬৬ কভার লেটারে বলা হয়েছে যে, তার বন্ধু প্রয়াত রাফেল মনিশোভস্কির মতে, বইটি একবার রুডলফ দ্বিতীয়, পবিত্র রোমান সম্রাট এবং বোহেমিয়ার রাজা ৬০০ ডুকাট, ২.১০ কেজি প্রকৃত সোনার বিনিময়ে কিনেছিলেন। মনিশোভস্কি ১৬৪৪ সালে মারা যান।

চিঠি অনুসারে, মনিশোভস্কি অনুমান করেছিলেন যে লেখক ছিলেন ১৩ শতকের ফ্রান্সিসকান ফ্রিয়ার এবং পলিম্যাথ রজার বেকন। আবার অনেকে বলেন গণিতবিদ জন ডি সম্ভবত ১৬০০ সালের দিকে সম্রাট রুডলফের কাছে পাণ্ডুলিপি বিক্রি করেছিলেন।

বেকন লেখক ছিলেন এই অনুমান ভয়নেচকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয় যে জন ডি পাণ্ডুলিপিটি রুডলফের কাছে বিক্রি করেছিলেন। ডি ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের দরবারে একজন গণিতবিদ এবং জ্যোতিষী ছিলেন যিনি বেকনের পাণ্ডুলিপিগুলোর একটি বড় সংগ্রহের মালিক ছিলেন বলে পরিচিত। তবে এসব যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে অনেকেই বলেন এই বইয়ের লেখক ছিলেন স্বয়ং ভয়নেচ নিজেই।

সূত্র: হিস্টোরি টুডে, মেন্টাল ফ্লস

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।