বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায় জনপ্রিয় যে খাবার খেয়ে

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৫ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

একেক দেশে খাবারের রেসিপি একেক রকম। কোথাও খুব বেশি মসলা দিয়ে রান্না করে খাবার খায়, আবার কোথায় কম মসলায় রান্না হয়। তবে সব দেশেই কিছু খাবার থাকে যা সবারই খুব পছন্দ। এমনকি পর্যটকরাও এখবার হলেও সেই খবার চেখে দেখেন। তবে জনপ্রিয় খাবারই যদি মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে সেটি মানুষ খায় কেন?

বিশ্বের অন্যতম এক জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে কোই প্লা। যা থাইল্যান্ড ও লাওসের ঐতিহ্যবাহী এক খাবার। জানলে অবাক হবেন, জনপ্রিয় এই খাবার খেয়েই নাকি প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যে কারণে একে মারাত্মক বা প্রাণঘাতী খাবারও বলা হয়ে থাকে।

লাওস এবং থাইল্যান্ডের ইসান অঞ্চলের লাও জনগণের প্রিয় খাবার এটি। এটি মূলত একটি সালাদ। যা তৈরি হয় কাঁচা মাছের কিমা, লেবুর রস, মরিচ ও কিছু মশলার মিশ্রণে। এই সাধারণ খাবারটিকে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক খাবারও বলা হয়। দাবি করা হয় যে শুধু থাইল্যান্ডেই প্রতি বছর ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই খাবারটি খেয়ে মারা যায়।

শুধু কোই প্লা নয়, থাইল্যান্ড স্ট্রিট ফুডের জন্য বিখ্যাত। যেখানে বেশিরভাগ খাবারই এমন কাঁচা অবস্থায় বিভিন্ন মসলায় মাখিয়ে পরিবেশন করা হয়। মাছ, মাংস, চিংড়ি, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। থাইল্যান্ডের আরেক জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে ডান্সিং স্রিম্প বা গোংটেন। যেটা তৈরি করা হয় জীবন্ত চিংড়ি দিয়ে। চিংড়িগুলোকে মরিচ, লেবুর রস, ফিস সস, পুদিনা, কুচু করা লেটুস, লেমস গ্রাসের সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।

মূলত কাঁচা মাছ খাওয়ার জন্যই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অনেকেরই মৃত্যু ঘটে খাবারটি খেয়ে। তবুও জনপ্রিয় ‘কোই প্লা’। থাইল্যান্ড ও লাওসবাসীর কাছে বিশেষ পছন্দের এই খাবার। রান্না ছাড়া মাছ বা মাংস কোনোটিই খাওয়া উচিত নয়। কারণ এসবে নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা প্যারাসাইটিক ডিজিজের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

যার ফলে বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে। জানা গেছে, থাইল্যান্ড ও লাওসের অনেক মানুষই কোল্যাঞ্জিওকার্সিনোমা বা পিত্তনালির ক্যানসারে মারা গিয়েছেন শুধু কোই প্লা খাওয়ার কারণেই।

২০১৭ সালে থাইল্যান্ডের খোন কায়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার সার্জন নারোং খুনটিকিও এজেন্স বলেন, ‘এখানে কোই-প্লা বড় এক স্বাস্থ্যের বোঝা।’ তিনি জানান, তার বাবা-মা দু’জনেই কোই প্লা খেয়ে পিত্তনালির ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে তিনি বহু বছর থাইল্যান্ডের গ্রামীণ উত্তর-পূর্বে ভ্রমণ করেছেন ও সস্তা এ ধরনের বিপজ্জনক খাবার খাওয়ার বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছেন।

তবে প্রাণ যেতে পারে জানা স্বত্বেও এই খাবারটি খাওয়া থেকে কেউ বিরত থাকেন না। স্থানীয় অনেকেই বলেন মৃত্যু অনেক কারণেই হতে পারে। সেজন্য ঐতিহ্যবাহী এই খাবার খাওয়া আমরা বাদ দিতে পারব না। তাদের দাবি, প্লেটে নেওয়ার আগে মাছ রান্না করলে তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।

পুরোনো প্রজন্ম যারা কোই প্লার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে তারা এটি ছেড়ে দিতে অনেক বেশি অনিচ্ছুক, কিন্তু নারোং খুনটিকিওর মতো চিকিৎসকরা আশা করেন যে অন্তত তরুণ প্রজন্ম এটি খেয়ে নিজেদেরকে যে বিপদের মুখোমুখি করছে তা বুঝতে পারবে।

বলা হয় যে কোই প্লার একক মুখই পিত্তনালীর ক্যানসার সৃষ্টি করতে প্রযুক্তিগতভাবে যথেষ্ট। নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এই রোগটির অস্ত্রোপচার ছাড়াই বেঁচে থাকার হার সবচেয়ে কম। থাইল্যান্ডের বৃহত্তম প্রদেশ ইসান, কোই প্লার জনপ্রিয়তার ফলে বিশ্বে পিত্তনালীর ক্যান্সারের সবচেয়ে বেশি রিপোর্ট করা হয়েছে এই অঞ্চলে।

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।