সবচেয়ে নিরাপদ সড়ক কোন দেশের?
২০১৮ সালের ২৮ জুলাই, দিনটি শুরু হয়েছিল আর দশটা দিনের মতোই। ঘড়িতে যখন ১১টা বা তার কিছুটা পর রাজধানীর বিমানবন্ধর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয় ও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়।
এই সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠিদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। ২০১৮-র নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত সংঘটিত একটি আন্দোলন বা গণবিক্ষোভ।
সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সাল থেকে ২২ অক্টোবর দিনটিকে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ছাত্র জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার’। তবে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন, গণবিক্ষোভ, করেও আসলে কতটা সড়ক নিরাপদ হয়েছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত সাড়ে ৫ বছরে দেশে প্রায় ৩৩ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন নিহত হয়েছেন, যার ১৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত (সাড়ে পাঁচ বছর) সময়ের ৯টি জাতীয় সংবাদপত্র, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময়ে ৩২ হাজার ৭৩৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৯৬ জন মানুষ।
তবে বাংলাদেশর অবস্থা এমন হলেও বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ সড়ক আইসল্যান্ডের বলে মনে করা হয়। একটি দেশের সড়ক টোল বা কতটা নিরাপদ তা যাচাই করা হয় সাধারণত প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার কতজন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন সেই পরিসংখ্যানে।এই সংখ্যা অনুসারে, আইসল্যান্ডে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সম্প্রতি পাওয়া ২০২৩ সালের ডাটা অনুসারে প্রতি ১ লাখে এখানে গড় মৃত্যুর হার ২.১ জন।
খুব বেশি পিছিয়ে নেই নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং সুইডেন, যার প্রতিটির প্রতি ১ লাখে বছরে গড় ২.২ জন সড়কে কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় মারা যায়। প্রতি ১ লাখ জনে ৪.৮ জন মারা যাওয়ার গড় মৃত্যুর হার সহ সড়ক নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়া শীর্ষস্থান থেকে অনেক পেছনে রয়েছে।
- আরও পড়ুন
- বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা
প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার প্রধান সড়কসহ আইসল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় বিশেষভাবে কঠোর সড়ক আইন নেই। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স রাখার ন্যূনতম বয়স ১৭ বছর, সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক, হ্যান্ডহেল্ড মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং গতি সীমা সাধারণত জনবহুল এলাকায় ৩০-৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা, গ্রামীণ এলাকায় নুড়ি রাস্তায় ৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং পাকা রাস্তায় ৯০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
২০১৮ সালে আইসল্যান্ড রক্তে অ্যালকোহল ঘনত্ব সীমা ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.০২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আইসল্যান্ড গণপরিবহন, সাইকেল চালানো এবং হাঁটার মতো গাড়ির বিকল্পগুলোর ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি সাইকেল চালক এবং বাস চালকরা আইন মেনে চলছে কি না সেই বিষয়ে কঠোরভাবে তদারকি করে। তবে সবচেয়ে বেশি সচেতন হচ্ছে সেদেশের নাগরিক। তারা কথোরভাবে এসব আইন মেনে চলেন রাস্তায়। ফলে দুর্ঘটনাও অনেক কম হয়।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের তথ্যের ভিত্তিতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সড়ক মৃত্যুর হারের দেশটি পশ্চিম আফ্রিকার গিনি। গিনিতে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার আনুমানিক ৩২.৪ জন সড়ল দুর্ঘটনায় মারা যান। শুধু ২০২১ সালেই গিনির রাস্তায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোও বিশ্বের সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনার তালিকায় একেবারে উপরের সারিতেই। লিবিয়ায় প্রতি ১ লাখের ৩০ জনের উপরে মৃত্যুর হার রেকর্ড করে, যেখানে জিম্বাবুয়ের মৃত্যুর হার প্রতি ১ লাখে ২৯.৯ জন।
তবে বিশ্বের অনেক দেশ সড়কে মৃত্যু শূন্যতে নামিয়ে আনার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ‘ভিশন জিরো’। দেশের মানুষকে সড়কে জীবনের নিরাপত্তা দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন দেশ।
সর্বপ্রথম ১৯৯৭ সালে সুইডিশ পার্লামেন্টে সড়ক নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য এবং নীতি কৌশল পাস হয়, যেটির নাম দেওয়া হয় ভিশন জিরো। লক্ষ্য হলো সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ যেন নিহত বা গুরুতর আহত না হন। বর্তমানে ভিশন জিরো এখন বিশ্বব্যাপী একটি আন্দোলন। এরই মধ্যে সুইডেন ‘ভিশন জিরো’ কৌশল বাস্তবায়নে এরই মধ্যে সফলতা পেয়েছে। দুই দশকের কিছু বেশি সময় ধরে সুইডেনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা কাজ করে যাচ্ছে রাস্তায় শূন্য প্রাণহানি এবং শূন্য গুরুতর জখমের লক্ষ্যে।
সূত্র: ড্রাইভ ডটকম
কেএসকে/এএসএম