ভৌতিক নাকি অন্যকিছু

বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৪ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

পৃথিবী দিনের আলোতে যত সুন্দর ও উপভোগ্য তেমনি রহস্যময় বটে। শুধু দিনে নয় রাতেও ঘটে নানান ঘটনা, যার কারণ রহস্য কোনোটিই হয়তো বের করা সম্ভব হয়নি। হয়তো মানুষের সেই ক্ষমতাও নেই।

মাঝ আকাশ থেকে প্লেন হারিয়া যাওয়া, কোনো নির্জন রাস্তায় যাওয়ার সময় ট্রেন গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসে অনেক আছে। এমনকি কোনো কোনোটা আবার শত বছর পর ফিরেও এসেছে। চীনের এমনই একটি ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিল একবার। যে ঘটনাটিকে অনেকেই জানেন বাস নম্বর ৩৭৫ বেইজিং, দ্য মিডনাইট বাস কিংবা দ্য লাস্ট বাস টু ফ্রেগনেন্ট হিলস নামে।

বাসটি হারিয়ে যাওয়ার ২দিন পরেই অবশ্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এর ভেতরের দৃশ্য অবাক করেছিল পুরো পৃথিবীর মানুষকে। ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের ১৪ নভেম্বর চিনের ইউয়াং মিং হুয়ান নামে এক বাসস্টপে মাঝরাতে ৩৭৫ নম্বর রুটের শেষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা ও এক যুবক। বাসটি এসে দাঁড়াতেই বৃদ্ধা এবং যুবকটি তাতে চড়ে বসেন। সেসময় বাসে আরও বেশ কয়েকজন মানুষ ছিলেন, এক দম্পতিও ছিলেন তাদের মধ্যে।

বাসটির গন্তব্য ছিল শিয়াং শান শহর বা ফ্রেগরেন্ট হিল নামের এক জায়গা। ইউয়াং মিং হুয়ান বাসস্টপ থেকে যা সাতটি স্টপ দূরে। একে একে অনেকেই ওই বাস থেকে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেমে যেতে থাকেন। কয়েকটি স্টপ পরে ওই বাসে ছিলেন কেবলমাত্র বৃদ্ধা, ওই যুবকটি, বাসের চালক এবং এক নারী কন্ডাক্টর।

বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা

কিছুক্ষণ পর চালকের নজরে আসে, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দু’জন ব্যক্তি বাস থামানোর ইশারা করছেন। যদিও সেটা কোনো বাসস্টপেজ ছিল না। তবুও অনেক রাত এবং এই রুটের এটিই শেষ বাস, এরপর আর কোনো বাস পাওয়া যাবে না। এজন্য চালক ওই দুই যাত্রীর সামনে বাস থামান।

কিন্তু বাস থামানোর পর চালক বুঝতে পারেন আসলে সেখানে তিনজন। দুজন ব্যক্তির মাঝে আরও একজন আছেন, যিনি তাদের দুজনের কাঁধের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পরনে চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তিনজন উঠে বাসের একদম শেষের সিটে গিয়ে বসেন।

যে এলাকা দিয়ে বাসটি যাচ্ছিল সেটিও নির্জন ছিল, যার কারণে বাসের ইঞ্জিনের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। বাসে থাকা বৃদ্ধা বারবার পেছনের যাত্রীদের দেখছিলেন এবং কিছু চিন্তা করছিলেন। তার কাছে ব্যাপারটি খুবই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল।

এরই মধ্যে তিনি তার সামনে থাকা ছেলেটিকে বলতে থাকেন তুমি আমার টাকার ব্যাগ চুরি করেছ। বাসের মধ্যে হৈচৈ শুরু করে দেন। কন্টাক্টর এসে বৃদ্ধাকে শান্ত করতে চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছেন না, বরং ছেলেটিকে দোষ দিয়েই যাচ্ছেন। ছেলেটি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, সে তার সামনে বসেছেন কীভাবে তার টাকার ব্যাগ সে চুরি করবে।

বৃদ্ধা ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলেন এবং ছেলেটিকে থানায় নিয়ে যাবেন বলে জোর করতে থাকেন। ডাইভার এবং যে নারী কন্টাক্টর ছিলেন বাধ্য হয়ে বৃদ্ধা এবং ওই ছেলেটিকে বাস থেকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেন। বাস থেকে নেমেও ছেলেটি বৃদ্ধাকে বোঝাতে থাকেন যে সে তার ব্যাগ নেয়নি।

বৃদ্ধা ছেলেটিকে থামিয়ে বলতে থাকেন আমি জানি তুমি আমার ব্যাগ নাওনি। এমনকি আমার ব্যাগ চুরিও হয়নি। ছেলেটি অবাক হয়ে জানতে চায় তাহলে বাস থেকে নামালেন কেন। এখন আমি বাড়িতে কীভাবে যাব, এটিই ছিল শেষ বাস। বৃদ্ধা তখন তাকে বাসের ওই তিন যাত্রী সম্পর্কে জানান, যে তারা মানুষ না। তোমার প্রাণ বাঁচাতেই বাস থেকে তোমাকে নামিয়ে এনেছি।

ছেলেটি বললো, যদি এমনই হতো, তাহলে বাসের ক্রু মেম্বারদের সঙ্গে কথা বললে না কেন? বৃদ্ধ মহিলা বলেন যে আমি মহিলা কন্ডাক্টরের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে এটি কেবল আপনার মায়া, অন্য কিছু নয়। বৃদ্ধা বলেন, তিনি এটি বাসের নারী কন্টাক্টরকেও বলেছিলেন, কিন্তু তিনি বলেছেন যে বৃদ্ধা ভুল দেখেছেন। এখন তাড়াতাড়ি থানায় চলো।

পুলিশ স্টেশনে গিয়ে বৃদ্ধা তাদের জানান, ওই বাসের তিন যাত্রী আসলে অশরীরী। নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই যুবকের বিরুদ্ধে পকেটমারির অভিযোগ তুলে তিনি অশান্তির সৃষ্টি করেছিলেন। তার দাবি ছিল, ওই তিন যাত্রীরই পা দেখতে পাননি তিনি। বাসের জানলা দিয়ে হাওয়া এলে তা তিন জনেরই দেহ ভেদ করে চলে গিয়েছিল।

বৃদ্ধার দাবি শুনে পুলিশ আবেন, নির্ঘাৎ বৃদ্ধা আর যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে পরের দিন ওই বাস সংস্থার একটি নোটিস দেখে চমকে যান পুলিশ। নোটিসে লেখা, ‘গত রাতে আমাদের সংস্থার ৩৭৫ রুটের শেষ বাসটি চালক এবং এক নারী কন্ডাক্টরসহ গায়েব হয়ে গিয়েছে।’ জিয়াং শান বাস টার্মিনালের কর্মকর্তারা জানতে পারেন যে বাসটিকে তার গন্তব্যের আগে চতুর্থ স্টেশনে শেষ দেখা গেছে।

অনেক খোঁজাখুঁজির পরও বাসের কোনো সদস্যের সন্ধান না পাওয়ায় কর্মকর্তারা থানায় বাসটির নিখোঁজ প্রতিবেদন লেখেন। জিয়াং শান-এর পুলিশ অফিসাররা এই বাসটির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে প্রতিটি থানায় রিপোর্ট করে যেখান দিয়ে এই বাসটি চলে গেছে।

বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা

১৪ নভেম্বর রাতে ৩৭৫ নম্বর বাসের নিখোঁজ রিপোর্ট পরদিন জিয়াং শান-এর পুলিশ স্টেশনে পৌঁছায়। ওই স্টেশনের অফিসার জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ওই বৃদ্ধা ও যুবককে থানায় ডেকে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। কিছুক্ষণ পরে এই বাস নং ৩৭৫ এর নিখোঁজ খবর পুরো বেইজিং জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বৃদ্ধা একটি টিভি চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে তিনি ১৪ নভেম্বর রাতে ৩৭৫ নম্বর বাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার গল্প বর্ণনা করেছেন।

১৬ নভেম্বর, ৩৭৫ নম্বর এই বাসটি স্টেশন থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে একটি নদী থেকে তোলা হয়। বাসে মোট ৫টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। নদী থেকে যখন বাসটি টেনে তোলা হচ্ছিল, তখন সেখানে পুলিশ ও চিকিৎসকরা সবাই উপস্থিত ছিলেন। যখন ওই পাঁচটি লাশ বের করা হয়, তখন সেই লাশগুলো দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ পাঁচটি মৃতদেহের মধ্যে বাসের ড্রাইভার এবং কন্টাক্টর নারীর মৃতদেহ ঠিকই ছিল। কিন্তু অন্য তিন যাত্রীর মরদেহ ছিল একেবারে পচাগলা।

এই ঘটনা নিয়ে আরও গবেষণা করার পর এমন অনেক রহস্যময় প্রশ্ন উঠেছে, যার উত্তর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেউ এখনো এই রহস্য ভেদ করতে পারেননি যে ওই তিনজনের মৃতদেহ কেন পচাগলা অবস্থায় ছিল। কোনোভাবে মনে হচ্ছে না তারা মাত্র দুদিন আগে মারা গেছে।

এছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন সামনে আসে, যেমন- বাসটি সারাদিন চলার পর পর্যাপ্ত ফুয়েলও ছিল না ১০০ কিলোমিটার যাওয়ার মতো। তাহলে কীভাবে ওতদূরে পৌছালো বাসটি। বাস্টির জ্বালানি ট্যাঙ্কে ছিল রক্ত। কীভাবে এবং কোথা থেকে সেখানে রক্ত আসলো। ওই যাত্রীগুলো আসে কারা ছিল। এমনকি বাসটির কোনো ফুটেজও পাওয়া যায়নি কোথাও। এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ বের করতে পারেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই ভুলে যেতে থাকে এই ঘটনা। আবার স্বাভাবিক হতে থাকে সবকিছু।

সূত্র: ভোকাল মিডিয়া ফিকশন

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।