ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসেন, এর আবিষ্কারক কে চেনেন?
অনেকে শখের বশে ফটোগ্রাফি করেন, আবার কেউ পেশা হিসেবে নিয়েছেন একে। একটি ঠিক ছবি তোলার জন্য অনেকে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেন। বিশেষ করে যারা ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি করেন তাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় আরও বেশি।
একটি ছবি তুলতে তাদের বছরের পর বছর জঙ্গলে কাটাতে হয়। কখনো জঙ্গলের হিংস্র পশুর সামনে পড়তে পড়তে বেঁচে যাওয়া, কখনোবা খরস্রোতা নদীতে বা পাহাড়ি পিচ্ছিল পথে বিপদ ঘটতে ঘটতে রক্ষা পাওয়া ওয়াইল্ডলাইফ ফটাগ্রাফারদের জীবনের নিত্যদিনের ঘটনা।
আজ বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস। ছবিপ্রেমীদের জন্য প্রতিবছরই ১৯ আগস্ট পালন করা হয় বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস। ১৮৩৯ সাল থেকে আগস্ট মাসের ১৯ তারিখকে আলোকচিত্রের দিন হিসেবে উদযাপন করে আসছে পুরো পৃথিবী। নাইসফোর নিপেক ও লুইস ডাগুয়েরে ১৮৩৭ সালে, ডেগুরে টাইপ ফটোগ্রাফিক সিস্টেম আবিষ্কার করেন।
লুইস ডাগুয়েরের জন্ম ১৭৮৭ সালের ১৮ নভেম্বর ফ্রান্সের কোরমেইলেস-এন-প্যারিসিসে। মধ্যবিত্ত এক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তার। ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই বেড়ে উঠেছিলেন লুইস। সেসময় তিনি সামনে যা দেখতেন ছবি এঁকে ফেলতেন।
১৩ বছর বয়সে একজন স্থপতির কাছে তিনি শিখেছিলেন শিল্পের যান্ত্রিকতা এবং কাঠামো ডিজাইন করার বিজ্ঞান। মাত্র চার বছর পর, ডাগুয়েরে অপেরার জন্য দৃশ্য চিত্রকলার অধ্যয়ন ও অনুশীলন করতে প্যারিসে চলে আসেন।
১৮২০ এর দশকের গোড়ার দিকে, ডাগুয়েরে একটি যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা আন্দোলন এবং অন্যান্য প্রভাব অনুকরণের জন্য দৈত্যাকার সব মূর্তি তৈরি, স্বচ্ছ পেইন্টিং তৈরি করতেন। এগুলো ছিল তাদেরই আবিষ্কার, যা ডায়োরামা নামে পরিচিত।
ফটোগ্রাফির আবিষ্কারকের কথা এলে দুজনকে স্মরণ করা হয়। একজন চিত্রশিল্পী লুই জ্যাক মান্ডে ডাগুয়েরে এবং অন্যজন ফ্রান্সের বিজ্ঞানী জোসেফ নিপস। নিপস ফটোগ্রাফি উদ্ভাবনের কাজ প্রথমে শুরু করলেও সর্বপ্রথম ছবি তোলার ব্যবহারিকের গুরুত্ব এবং উপায় আবিষ্কার করেন ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানী লুই। আর তার নাম অনুসারে ছবি তোলার এই উপায়ের নাম দেওয়া হয় ‘ডাগুয়েরো টাইপ’ ফটোগ্রাফি।
১৮২৫ সাল থেকে লুই নিপসকে চিনতেন। নিপস সর্বপ্রথম সিলভার ক্লোরাইড এবং সিলভার হ্যালাইড ফটোগ্রাফি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। কিন্তু আলোর সংস্পর্শে এলে কীভাবে অন্ধকার হওয়া থেকে রোধ করা যায় তা তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না।
গবেষণার এক পর্যায়ে ১৮২৬ সালে প্রথম সত্যিকারের ক্যামেরা ছবি তুলতে সফল হন নিপস। তিনি বিটুমেন দিয়ে লেপা পিউটারের একটি শিট ব্যবহার করেছিলেন, যার জন্য কমপক্ষে আট ঘণ্টা এক্সপোজার সময় প্রয়োজন হয়! নিপসের এই হেলিওগ্রাফকে আলোকচিত্রের ইতিহাসে প্রাচীনতম আলোকচিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
১৮৩৩ সালে নিপেসের মৃত্যু হলে ডাগুয়ের ফটোগ্রাফি এবং তার ডায়োরামা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যান। রাসায়নিক এবং রৌপ্য প্লেট একত্রিত করার পরে, তিনি ডাগুয়েরোটাইপ প্রক্রিয়া নিয়ে এসেছিলেন। তিনি এক্সপোজার সময়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে নামিয়ে আনেন। যা নিপস করেছিলেন আট ঘণ্টা। এটি ফটোগ্রাফির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যা ক্যামেরার গ্রহণযোগ্যতা এবং সাফল্যে ব্যাপক অবদান রেখেছে। ১৮৩৯ সালে ডাগুয়েরোটাইপ বিশ্বের জন্য বড় উপহার হিসেবে অ্যাখ্যা পায়।
১৮৩৯ সালের ১৯ আগস্ট ‘দাগুইরিয়ো টাইপ’ ফটোগ্রাফি মুক্তি লাভের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফটোগ্রাফির সফল যাত্রা। সেদিন ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্স’ প্যারিসে একটি জনসভার আয়োজন করে এবং সেখানে এই কীভাবে ছবি তোলা হয়, সেটি সবাইকে দেখানো হয়। ১৮৩৯ সালের ১৯ আগস্ট ফরাসি সরকার এই দিনকে বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
এরপর একবিশং শতাব্দিতে এটি ডিজিটালি শুরু করেন অস্ট্রেলীয় আলোকচিত্রী কোরস। তিনি সারা পৃথিবীর সব আলোকচিত্রীদের একত্রিত করার লক্ষ্যে ‘ওয়ার্ল্ড ফটো ডে’ আয়োজন করে ২০০৯ সালে। এর মাধ্যমে ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম অনলাইন গ্যালারির আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর দিনটিকে বেশ ঘটা করেই পালন করেন আলোকচিত্রীরা।
কেএসকে/জেআইএম