ইন্টারনেট বিহীন বন্ধুত্ব

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪

প্রযুক্তির আকাশচুম্বী উন্নতির ফলে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিপুল পরিবর্তন এসেছে। আর বন্ধু দিবস উদযাপনও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সময়ে ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিল না, তখন বন্ধু দিবস উদযাপনের ধরণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে, এটি পেয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার আগে, বন্ধু দিবস উদযাপন করা ছিল অনেকটা সরাসরি এবং ঘনিষ্ঠ। আমরা আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতাম, একসঙ্গে গল্প করতাম, ফ্রেন্ডশিপ ব্যাচ বিনিময় করতাম। সেই সময়ে বন্ধু দিবস উদযাপনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। ঘরে থাকলে বন্ধুত্বের বার্তা আদান-প্রদানে বাবার মুঠোফোন ছিল শেষ ভরসা। খুদে বার্তা কিংবা এক মিনিট কথা বলাই ছিল আনন্দের। এই যোগাযোগগুলোতেই ফুটে উঠতো বন্ধুত্বের উষ্ণতা ও আন্তরিকতা। দেখা হলে বন্ধুরা একসঙ্গে জড়ো হয়ে সময় কাটাতো, গল্প জমাতো, আড্ডা দিতো। এ সময়গুলো ছিল বিশেষ এবং স্মরণীয়। এছাড়াও বন্ধুরা একে অপরকে দিতো কার্ড উপহার। এই উপহারগুলো ছিল বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক।

তখনকার সময়ে বিকেলের আড্ডা ছিল বন্ধুত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে সবাই মিলে একসঙ্গে আড্ডা , বাইরের খেলতে যাওয়া রোজকার রুটিন। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলাগুলো ছিল খুব জনপ্রিয়। মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের অভাবে সরাসরি যোগাযোগই ছিল বন্ধুত্বের মেলবন্ধন। আউটডোর খেলাগুলো বন্ধুত্বের সম্পর্ককে মজবুত করে তুলত। মোবাইল ফোনের অভাবেও বন্ধুত্বের গভীরতা কম ছিল না; বরং সরাসরি যোগাযোগেই বন্ধুত্বের মাধুর্যতা ছিল বেশি।

আরও পড়ুন

ব্যাচেলর জীবনে মেস বাসার মধ্যে এমন বন্ধুত্ব এখনো দেখা মেলে। একই ছাদের নিচে থাকার ফলে, দিনরাতের অনেকটা সময়ই তাদের একসঙ্গে কাটে। রাত জেগে পড়াশোনা, একসঙ্গে রান্না করা, বিনোদন, জন্মদিন পালন কিংবা আড্ডা সবকিছুতেই এক অভিন্ন বন্ধন। মেসের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো যেমন, এক প্লেটে খাবার খাওয়া, মধ্যরাতে একসঙ্গে চা খেতে যাওয়া বা ছোটখাটো উৎসব পালন, এগুলো মেস বন্ধুদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এই বন্ধনগুলো অনেকক্ষেত্রে জীবনের অন্য সময়ের বন্ধুত্বের থেকে অনেক শক্তিশালী ও অন্তরঙ্গ।

তবে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বন্ধু দিবস উদযাপনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকাল বন্ধু দিবস পালনের কিছু নতুন ধরণ দেখা যায়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। মেসেজ, ভিডিও কল, গ্রুপ কল, অনলাইন গেমস, ডিজিটাল কার্ড পাঠানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করছি।

ইন্টারনেটের যুগে বন্ধু দিবস উদযাপন সহজতর ও বৈচিত্র্যময় হয়েছে, তবে কিছু পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়। অতীতে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুত্বের গভীরতা অনেক বেশি ছিল, যেখানে আজকের ডিজিটাল যুগে তা কিছুটা হালকা হয়ে গেছে। সরাসরি চিঠি বা কার্ডের উষ্ণতা ডিজিটাল বার্তায় তেমনভাবে অনুভূত হয় না। প্রযুক্তির যুগে বন্ধু দিবস উদযাপন হয়েছে আরও সহজ ও দ্রুত, তবে অতীতের সেই সরাসরি এবং আন্তরিক যোগাযোগের আনন্দ আজও অনেকের স্মৃতিতে অম্লান।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।