‘প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’

কানিছ সুলতানা কেয়া
কানিছ সুলতানা কেয়া কানিছ সুলতানা কেয়া , সহ সম্পাদক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪

বন্ধু মানেই মন খুলে কথা বলা, বিপদে-আপদে সব সময় ভরসা করা যায় এমন একজন। সবার জীবনেই এমন একজন বন্ধু থাকে। যার সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বন্ধু ছাড়া জীবন কাটানো খুবই কষ্টকর। তাইতো বিখ্যাত আমেরিকান সাহিত্যিক রালফ ওয়াল্ডো এমারসন বলেছিলেন,‘প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’ ।

এলবার্ট হুবার্ট লিখেছিলেন, বন্ধু হয় সেই ব্যক্তিরাই যারা আপনার সম্পর্কে সব জানে, সত্য-মিথ্যার বাইরে আপনাকে পছন্দ করে। বন্ধুত্ব কখনো পুরোনো হয় না, আবার বন্ধু হতেও কোনো বয়সের ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যে কোনো বয়সেই যে কেউ হয়ে উঠতে পারে আপনার প্রিয় বন্ধু। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ছোটবেলার স্কুলের বন্ধুরাই থেকে যায় আজীবন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক আসলে আত্মার।

আজ বিশ্ব বন্ধু দিবস। তবে ৩০ জুলাই বন্ধু দিবস শুনে অনেকেই দ্বিধায় পড়তে পারেন। কারণ বিশ্বব্যাপি আগস্টের প্রথম রোববার ঘটা করে পালন করা হয় বন্ধু দিবস। মূলত ৩০ জুলাই বন্ধু দিবস হিসেবে স্বীকৃত জাতিসংঘ থেকে। ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেডের পক্ষ থেকেই প্রথম ১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। বন্ধুত্বের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সংস্কৃতির স্থাপনের জন্য প্রচার চালায় এই সংস্থা।

‘প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’

এরপর দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এরপর ছড়িয়ে যায় দিবসটি। বন্ধু দিবসে বন্ধুদের ফুল, কার্ড, রিস্ট ব্যান্ড ইত্যাদি উপহার দিয়ে বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করা হয়। একেক দেশে একেক তারিখে বন্ধু দিবস পালিত হয়। অনেকেই মনে করেন প্রথম দিকে বিভিন্ন কার্ড তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপ ডে’র চল শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে এই দিন উদযাপন বিশাল আকার ধারণ করে।

আরও পড়ুন

যদিও ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যেই এর প্রচলন শুরু হয়েছিল। সেই সময়টা আরও বহু বছর আগে, ১৯৩০ সালে এই কাজটি করেছিলেন বিশ্বখ্যাত উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হল। তিনি প্রতিবছর ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধুত্ব দিবস উদ্যাপনের বিষয়টি সামনে আনেন। এদিন কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধু দিবস পালন করার চল শুরু হয়। অবশ্য তার সে প্রচেষ্টা অতটা সফল হয়নি।

১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্ব দিবস পালনের চিন্তা ডা. র্যামন আর্টেমিও ব্রাকোর মাথায় আসে। প্যারাগুয়ে শহরের পুয়ের্তো পিনাস্কোয়ে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজে বসেছিলেন তিনি। তখনই বন্ধুদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন মেরি গ্রুপ ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড।

এই সংস্থাটি জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ নির্বিশেষে নিঃস্বার্থ ও মানবদরদী বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কাজ করে। এরপর ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রসংঘ তৎকালীন সাধারণ সচিব কোভি আন্নানের স্ত্রী ন্যান আন্নান উইনি দ্য পু কার্টুন চরিত্রকে বন্ধুত্বের দূত হিসেবে চিহ্নিত করেন।

১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই প্রথম ফ্রেন্ডশিপ ডে উদযাপিত হওয়ার পর ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলি অব দ্য ইউনাইটেড নেশন’ ২০১১ সালের ৩০ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। মূলত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদি নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশের মানুষের বন্ধুত্বের একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস ঘোষণা করে।

‘প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’

এ.পি জে আব্দুল কালামের বন্ধু নিয়ে একটি উক্তি আছে, তিনি বলেছিলেন, ‘একটি বই একশোটি বন্ধুর সমান কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান।’ আপনার বন্ধু হয়ে উঠতে পারে আপনার জ্ঞান আহরণের উৎস। বন্ধুদের কাছ থেকে শেখা কোনো কিছু আপনি সারাজীবন মনে রাখতে পারবেন। তা হোক কোনো পাঠ্য বইয়ের বিষয়, কিংবা দুষ্টমি।

বন্ধুরা পাশে থাকলে যে কোনো সমস্যা সমাধান হয়ে যায় নিমিষেই। বন্ধুরা পাশে থাকলে কোনো কিছুই কঠিন মনে হয় না, বন্ধুরা পাশে থাকলে কোনো দুঃখই স্থায়ী হতে পারে না জীবনে। শিল্পী তপুর গাওয়া গানটা মনে পড়ে নিশ্চয়ই, ‘পুরো পৃথিবী এক দিকে, আর আমি অন্য দিক/সবাই বলে করছ ভুল, আর তোরা বলিস ঠিক/তোরা ছিলি, তোরা আছিস/জানি তোরাই থাকবি/বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কী লাগে?’ ।

মূলত এই দিনটি প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো, তাদের স্মরণ করা, ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই। যেসব বন্ধুদের সঙ্গে একদিন দেখা না হলেই মনে হতো বছর বুঝি একটি কেটে গেছে, সেখানে সেই বন্ধুদের সঙ্গে বছরের পর বছর দেখা হয় না, কথা হয় না। কিন্তু আপনার সব সময় তাদের কথা মনে পড়ছে, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে দেখা করা সম্ভব হয় না। তাদের সঙ্গে আজ দেখা করুন, গল্পে আড্ডায় মেতে উঠুন কিছুটা সময়। চলে যেতে পারেন আপনাদের স্মৃতিময় কোনো জায়গায়।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।