২৬৭ বছর পরও পলাশীর যুদ্ধ যে বার্তা দেয়

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ২৩ জুন ২০২৪

পলাশীর যুদ্ধের কথা বললে আমাদের মনে প্রথমেই আসে বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনি। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন মুর্শিদাবাদের পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘটিত এই যুদ্ধে, নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে নবাব পরাজিত হন এবং ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়।

এই যুদ্ধের আজ ২৬৭ বছর পূর্ণ হলো। পলাশীর যুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং এর থেকে নেওয়া শিক্ষা আমাদের বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পলাশীর যুদ্ধ ছিল মূলত একটি ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধ। নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফলে নবাবের পরাজয় ঘটে। মীর জাফর ক্ষমতার লোভে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবকে পরাজিত করে। ফলস্বরূপ বাংলা, বিহার, ওড়িশার শাসনভার ব্রিটিশদের হাতে চলে যায় এবং ভারতবর্ষে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়।

মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা শুধু সিরাজউদ্দৌলার পতনই ঘটায়নি বরং পুরো ভারতবর্ষকে ব্রিটিশদের দাসত্বে এনে ফেলেছিল। ব্যক্তিগত স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভের জন্য জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তার পরিণাম কী হতে পারে, তা পলাশীর যুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে। বর্তমান সমাজেও আমরা দেখি, ব্যক্তিগত লাভের জন্য অনেকেই দেশ ও সমাজের স্বার্থ ত্যাগ করে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এ ধরনের আচরণ সমাজের ক্ষতি করে ও অমঙ্গল বয়ে আনে।

আরও পড়ুন

তাই পলাশীর যুদ্ধের একটি বড় শিক্ষা হলো ঐক্য। যদি নবাবের সেনাবাহিনীতে বিশ্বাসঘাতকতা না হতো, তবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারতো। বর্তমান সময়ে, আমাদের সমাজেও ঐক্য এবং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভেদ এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব আমাদের সমাজকে দুর্বল করে তুলছে। ঐক্যের মাধ্যমে আমরা যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারি।

এই যুদ্ধের ইতিহাস আমাদেরকে আরও শিক্ষা দেয় যে সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতা ছাড়া একটি সমাজ সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতিহাসের সঠিক শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যাতে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষার মাধ্যমে আমরা একটি সচেতন এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

আরেকটি শিক্ষা হলো নৈতিকতা ও ন্যায়বোধের প্রয়োজনীয়তা। মীর জাফরের নৈতিক অবক্ষয় আমাদের দেখিয়েছে কীভাবে একটি ব্যক্তির অনৈতিক সিদ্ধান্ত একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। বর্তমান সমাজে নৈতিকতা ও ন্যায়বোধের চর্চা আমাদের সবার দায়িত্ব। নৈতিকতার চর্চা করলে সমাজে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং জনগণ সঠিক পথে পরিচালিত হবে।

বর্তমান সময়ে পলাশীর যুদ্ধ থেকে নেওয়া নৈতিক শিক্ষা আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। কেননা সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন রাজনীতি, ব্যবসা, পরিবার সবক্ষেত্রেই আমরা বিশ্বাসঘাতকতা, নৈতিক অবক্ষয় এবং ঐক্যের অভাব দেখতে পাই। কিন্তু আমরা যদি পলাশীর যুদ্ধের শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে এসব সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।

এছাড়াও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পলাশীর যুদ্ধের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন স্তরের নেতাদের উচিত নৈতিকতা এবং সততার চর্চা করা এবং জাতির স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখা। পলাশীর যুদ্ধের ২৬৭ বছর পূর্তিতে আমাদের উচিত সেই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা প্রয়োগ করা। ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সততা, নৈতিকতা এবং ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।