ধলেশ্বরীর বুকেই বাবু রাজবংশীর জীবন

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:০৯ পিএম, ০৯ জুন ২০২৪

ধলেশ্বরী, একসময়ের উত্তাল ও প্রমত্তা নদী। আজ মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হলেও, হাজারো দরিদ্র মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন হয়ে আছে যুগের পর যুগ ধরে। শিল্পবিপ্লব আর নগরায়নের জোয়ারে আজ তার স্বচ্ছ জলধারা কিছুটা দূষিত, তবে মানুষের জীবিকার জন্য তার অবদান আজও অপরিসীম।

প্রতিদিন ধলেশ্বরীর বুকে চলে শত শত নৌযান। এই বিশাল জলাধারকে নষ্ট করার জন্য শিল্প-কারখানা তাদের বিষাক্ত বর্জ্য ঢেলে গেলেও, ধলেশ্বরী তার প্রাণ দিয়ে সর্বহারার বন্ধুর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশালদেহী জলযানের প্রতিদিনের হুঙ্কার, তাদের ধাক্কায় সৃষ্ট দানবীয় ঢেউ, আর শিল্পকারখানার বর্জ্য সামলেই ধলেশ্বরী নিত্যদিন হাজারো গরীব মানুষের জীবিকা প্রদান করছে।

আরও পড়ুন

হেমায়েতপুরে ধলেশ্বরীর বুকে নৌকার ঘাটে কথা হয় মাঝি বাবু রাজবংশীর সঙ্গে। ছোট থেকেই নদীর সঙ্গে তার জীবন মিশে আছে। নৌকার বৈঠা হাতে প্রতিদিন অসংখ্যবার যাত্রী পারাপার করে বাবু রাজবংশী ও তার সহকর্মীরা। গড়ে প্রতিদিন ৬০০-৮০০ টাকা আয় করেন তারা। বিশেষ দিবসে বাড়তি আয়ও হয়। এর মধ্যে ঘাটের নানা খরচ বাবদ খরচের খাতায় চলে যায় কিছু। বাকি টাকা দিয়ে সংসারের নিত্যদিনের খরচ মেটাতে হয়।

হেমায়েতপুরের সিংগাইর ব্রিজটি ধলেশ্বরীর দুই পাড়কে সংযোগ করলেও, ছোট ডিঙ্গি নৌকার প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরায়নি। স্থানীয়রা যাতায়াতের জন্য এবং দূর থেকে আগত পর্যটকরা আনন্দের জন্য নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দেয়। বাবু রাজবংশী বলেন, এই নদীই আমাদের জীবন। এখানেই আমরা বেঁচে আছি, আমাদের স্বপ্নও বেঁচে আছে।

বাবু রাজবংশী শুধু যাত্রী পারাপার করেই তার জীবন চালান না, তিনি মাছও ধরেন। সেই মাছ বিক্রি করেই তার পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বর্তমানে নদীতে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। দেশী প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাকার মাছ। নদীতে জাল ফেললেই উঠে আসে অসংখ্য রাক্ষুসে সাকার। এই মাছগুলো জাল ছিঁড়ে ফেলে, খাবারের অনুপযোগী। এ কারণে অনেক জেলে পরিবারের জীবন কাটছে দুঃখ-কষ্টে।

ধলেশ্বরী আজও হাজারো মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান অবলম্বন হলেও, তার দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি একটি বড় সমস্যা। এখানকার মাঝি ও জেলে পরিবার ধলেশ্বরীর উপর নির্ভরশীল। তাদের জীবিকা ও জীবনযাত্রা সরাসরি নদীর স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত। এজন্য ধলেশ্বরীর দূষণ রোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা অত্যন্ত জরুরি।

বাবু রাজবংশীর মতো মানুষেরা প্রতিদিন এই নদীর বুকে জীবিকার জন্য যুদ্ধ করেন। ধলেশ্বরী বেঁচে থাকলে, তারা বেঁচে থাকবে। তারা স্বপ্ন দেখে, এই নদী একদিন আবার সজীব হবে, দূষণমুক্ত হবে। তখন ধলেশ্বরীর বুকে আরও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে, যা তাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও সহজ করবে।

ধলেশ্বরী নদী শুধু একটি জলধারা নয়, এটি হাজারো মানুষের বেঁচে থাকার মাধ্যম। বাবু রাজবংশী ও তার মতো অনেক মানুষের জীবিকার গল্প রচিত হয় এই নদীতে। দূষণমুক্ত, প্রাণবন্ত ধলেশ্বরী সবার জীবনে সুখ ও শান্তি বয়ে আনবে সরকারের কাছে এই প্রত্যাশা করেন ধলেশ্বরীর মাঝিরা।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।