বিশ্ব দুধ দিবস
১২ হাজার বছর আগেও গৃহপালিত প্রাণির দুধ পান করত মানুষ
শিশুদের তো বটেই বড়দেরও দুধ পছন্দের খাবার। বাঙালির কাছে দুধ-ভাত অন্য এক আবেগ জড়িয়ে আছে। বাংলায় নানান ছড়াও আছে দুধ-ভাত নিয়ে। তবে শুধু আবেগ নয়, দুধ খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন। দুধের নানা পুষ্টিগুণ আপনাকে সুস্থ, সবল ও নিরোগ রাখতে পারে। এজন্যই দুধকে বলা হয় সুপার ফুড।
দুধের মধ্যে থাকা এসব পুষ্টিগুণের কথা বিজ্ঞান জানতে পেরেছে খুব বেশি দিন আগে নয়। তবে দুধ খাওয়া বা পান করা কিংবা খাদ্য তালিকায় দুধ কিন্তু মোটেই আধুনিক সভ্যতায় নয়। এটি ১২ হাজার বছর আগে ৯০০০-৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নিওলিথিক যুগে শুরু হয়েছে। সে যুগেই মানুষ গৃহপালিত পশুর দুধ পান করতেন।
নিওলিথিক যুগের আগে মানবজাতির ইতিহাসে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ল্যাকটোজ সহনশীলতা হারিয়ে গিয়েছিল। তখনকার মানুষ বেশিরভাগই গাঁজনযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য খেত, যা সহজে হজমযোগ্য ছিল। এটি অনেকটা এখনকার টকদইয়ের মতো ছিল। পরবর্তীতে যুগে যুগে দুধ থেকে নানান ধরনের খাবার তৈরি হয়েছে। মাখন, পনির, চিজ, দই, ঘি ধীরে ধীরে যুক্ত হয়েছে খাবারের তালিকায়। যার মূল উপাদান দুধ। গরু, ছাগল, ভেড়ার দুধ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সারাবিশ্বে।
আরও পড়ুন
আধ্যাত্মিক এবং যৌক্তিক উভয় কারণেই দুধ অনেক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রাচীন মিশরীয়, গ্রীক এবং সুমেরীয়দের পৌরাণিক কাহিনিতে দুধ ছিল একটি মূল উপাদান। পশ্চিম আফ্রিকার কিছু লোক বিশ্বাস করত যে মহাবিশ্ব এক ফোঁটা দুধ দিয়ে শুরু হয়েছিল। মঙ্গোলিয়ানরা ঘোড়ার দুধ শুকিয়ে ভ্রমণের সময় সঙ্গে রাখত। যা পরর্তীতে গরম পানিতে ভিজিয়ে তরল করে খেত। এটি তাদের দীর্ঘ ভ্রমণে পুষ্টি সরবরাহ করত।
দুধকে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবা নিয়েও বিদ্রুপ করা হত। প্রথম দিকের জাপানি বৌদ্ধরা মাখন খেত, এজন্য তাদের অনেকেই উপহাস করতে ছাড়েননি। উত্তর ইউরোপীয়রা রেইনডিয়ারের দুধ খেত, যে কারণেও তাদের অনেকেই অপবিত্র ভাবত। এদিকে রোমে দুধকে নিম্ন-শ্রেণির পানীয় বলে মনে করা হত, কেবল সেসব কৃষকরা দুধ পান করতেন যাদের অন্য কোন খাবার খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না।
দুধের ইতিহাসের পরবর্তী অধ্যায় আসে শিল্পায়ন নিয়ে। যদিও বেশিরভাগ দেশ এবং সংস্কৃতি দুধকে গ্রহণ করেছিল, অনেক জায়গা দুধের চাহিদা মেটাতে গরুর খামার গড়ে ওঠে। হঠাৎ করে তখন লন্ডন এবং প্যারিসের মতো জায়গায় দুধের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। গ্রামীণ আমদানি দুধকে একটি বড় সময়ের বাজারে রূপান্তরিত করেছে। এমনকি রেলওয়ে গ্রামীণ কৃষি এলাকা থেকে ইংল্যান্ডের শহরগুলোতে দুধ পরিবহনের অনুমতি দেয়।
১৬০০-এর দশকে আইসক্রিম আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবতা একটি চমৎকার দুধের রেসিপির সঙ্গে পরিচিত হয়। ১৮০০-এর দশক জুড়ে, দুধের চারপাশে অনেক নতুনত্ব ছিল, ব্রুয়ারি খোলা থেকে শুরু করে গরুকে খাওয়ানোর জন্য ঘাস উৎপাদন করা শুরু হয়। এছাড়া গুটিবসন্ত এড়াতে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন
সূত্র: ন্যাশনাল টুডে
কেএসকে/এমএস