তীব্র তাপপ্রবাহ, হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রতিরোধে করণীয়
মাঈন উদ্দীন রুবেল
প্রতিদিন টিভি নিউজ ও খবরের পাতার প্রধান শিরোনাম হয়ে থাকে হিট স্ট্রোক ও প্রচণ্ড তাপদাহের খবর। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন হিট স্ট্রোকে স্কুল-কলেজর শিক্ষকসহ শিক্ষার্থী হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে এবং অজ্ঞানও হয়ে পড়ছে। ২৯ এপ্রিল সারাদেশে ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ এবং ৬ জন অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর, রিকশা ও ভ্যান চালকরা এখন চরম ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে চলাফেরা করছে। গত সোমবার চুয়াডাঙ্গায় ৪২° সেলসিয়াস ও মঙ্গলবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮° সেলসিয়াস অনুভূত হয়েছে। কিন্তু বাতাসের হাওয়ায় তা আরও বেশি অনুভূত হয়, যেন আগুনের তাপে শরীরের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় আমাদের প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে বাঁচতে সচেতনভাবে চলেফেরা করা উচিত যাতে আমরা অস্বস্তি এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকি। অযথা বাড়ির বাইরে বের না হওয়া, অপ্রয়োজনে বাইরে ঘুরাঘুরি না করা। বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা, খাবার স্যালাইন, লেবু এবং পানি সঙ্গে রাখা। যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে ছায়া স্থলে অবস্থান করা।
আরও পড়ুন
এই তীব্র গরমে পথচারী, দিনমজুর, খেটে খাওয়া, রিকশা চালক মানুষের দুঃখ-দুর্দ্দশার শেষ নেই। জীবকার তাগিদে রাস্তা-ঘাট, বাজার, ফুটপাত, মাঠে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। তাদের পাশে আমাদের যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী লেবুর শরবত, বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন এবং মাথায় ব্যবহার করার মতো ছোট ছাতা নিয়ে এগিয়ে এলে তাদের জীবনে স্বস্তি আসবে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
অর্থের অভাবে এসব খাওয়া ব্যয়বহুল হয়ে যায়, যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব নাও এতে পারে। তাই তাদের পাশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। এছাড়া হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে আমাদের ঠান্ডা জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর বিশুদ্ধ পানি, লেবুর শরবত, ডাব, খাবার স্যালাইন খাওয়া।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। একটানা কাজ করা থেকে বিরত থাকা। বাইরের থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে গোসলে না যাওয়া, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর হাত, মুখ ধুয়ে নিন বা গোসল করে নিন। এ সময় মোটা কাপড় পরিহার করে পাতল সুতির কাপড় পরুন।
এছাড়া পরবর্তি সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহ রুখতে বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। আমরা পৃথিবী, দেশ ও পরিবেশকে উত্তপ্ত গরম থেকে বাঁচাতে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বলাই’ নামক ছোটগল্পে পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি যে অনুরাগ সৃষ্টি করেছেন, তা অনন্য। ‘সভ্যতার প্রতি’ কবি তার কবিতায় শহুরে জীবনের প্রতি একপ্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,/ লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর/ হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,/ দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি...’। কবি তার এ কথার মাধ্যমে বৃক্ষ নিধন না করে পরিবেশকে শান্ত রাখার কথায় বলেছেন।
আরও পড়ুন
লেখক: প্রাবন্ধিক ও লেখক
কেএসকে/এএসএম