আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি, সৃষ্টি হয় এক ইতিহাস
অডিও শুনুন
এই যে ৯-৫টা অফিস করছেন। দিনে ৮ ঘণ্টা, এর একটু বেশি হলে তা ধরা হয় ওভারটাইম। অর্থাৎ সেই সময়ের জন্য কোম্পানি আপনাকে বাড়তি অর্থ প্রদান করবে। কিন্তু এই ৮ ঘণ্টা কাজের সময় কবে থেকে হলো জানেন কি? এর পেছনে আছে এক করুণ ইতিহাস।
আজ পয়লা মে, বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’। যা ‘মে দিবস’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকেন।
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি আর দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। মাঠে-ঘাটে, কল-কারখানায় খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। সেদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে নিহত হন ১০-১২ জন শ্রমিক। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।
আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোক্তা। হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে কোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। তাই ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মিশর, ইথিওপিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কানাডায় ১ মে পালিত হয় শ্রমিক দিবস। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। মে দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন দিনটি পালন করতে শোভাযাত্রা, শ্রমিক সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে।
কেএসকে/জেআইএম