জীবিকার তাগিদে তীব্র দাবদাহেও আগুনের পাশেই কাটছে দিন
মিরাজ উদ্দিন
তীব্র গরমে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল যশোর জেলায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন এই তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। নানাভাবে মানুষ গরম থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছু মানুষ জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের পাশে বসে কাজ করছেন।
কারওয়ান বাজারের বিল্লাল হোসাইন, বয়স ৩৪। ৮ বছর বয়সে এই কামার পেশায় আসেন এখন প্রায় তিন যুগে পা রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় কাজ করার মধ্যে এই রকম তাপ কখনো মোকাবিলা করিনি। গরমে আসলেই অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু কী করবো পরিবারের দিকে তাকালে বিশ্রাম নিতে মন চায় না। নিজকে মানিয়ে নিয়েছি। কাজ থেকে বের হলে দেখি শুধু রোদের তাপে মানুষ হাহাকার আর আমরা আগুনের তাপে সারাদিন কাজ করছি, দীর্ঘদিন ধরে করে আসার কারণে এখন মানিয়ে গেছে শরীরের সঙ্গে।’
বিল্লাল হোসাইনের মতো আরও অনেকেই আগুনের তাপের পাশে বসে কাজ করছেন। ৬৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাঈম মিয়া, ৪০ বছর ধরে দৈনিক মজুরি হিসেবে কামারের দোকানে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘এই গরমের মধ্যে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়। পরিবার আছে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আবার কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। গরমের জন্য ঘরে বসে থাকলে তো আমাগো পেট চলবে না। সরকার বলে আপনারা বাসায় থাকেন রোদে বের হয়েন না। বসে থাকলে সরকার পাঁচ টেহা দিবো। স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হলেও করতে হবে ঐ যে আমাগো সংসার। এইভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করলেন দিন মজুর নাঈম মিয়া।’
আরও পড়ুন
‘প্রচুর গরম ভাই এই গরমে কাজ করতে মন চাই না। সারা শরীরের জামাকাপড় সব ভিজে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাই, এই পানি কই যায় কোন স্টেশন নাই। এভাবে বিবর্জিত চেহারায় বলেন মো: শফিক।’
তীব্র গরমে যারা আগুন নিয়ে কাজ করছেন তাদের হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা,আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘এসময়ে সবচেয়ে বেশি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে আগুনের পাশে বসে যারা কাজ করেন তাদের। গর্ভবতী নারী এবং বাচ্চারা এই সময়ে আগুনের পাশে যাওয়া যাবে না। শুধু বাচ্চারা নয় আগুন থেকে বৃদ্ধ যারা আছেন এই গরমে তাদেরকে নাতিশীতোষ্ণ জায়গায় রাখতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এছাড়াও কিছুক্ষণ কাজ করার পর নিতে হবে বিশ্রাম এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলার পরামর্শ ও দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।’
হিটস্ট্রোকে এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজবাড়ী, হবিগঞ্জ ও খুলনায় তিন জন আরেকজন চুয়াডাঙায়। তীব্র গরমে সবাই যখন নাভিশ্বাস। একটু স্বস্তির জন্য ঠান্ডা পানি পান কিংবা ছায়ার মতো জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায় অনেককে। তখন এই মানুষগুলো পরিবারের কথা চিন্তা করে আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছে। শুধু পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
আরও পড়ুন
কেএসকে/এমএস