বিজয় দিবস ও আমাদের ছেলেবেলা

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আমার কাছে ১৬ ডিসেম্বর মানে ভিন্ন কিছু। ছুটির দিনে এক বান্ডিল কাগজের পতাকা কেনা, সেগুলো ঘরের মধ্যে সুতা দিয়ে ঝোলানো, দূর থেকে ভেসে আসা সাউন্ডবক্সে বিজয়ের গান শোনা, ভালো খাবার খাওয়া ইত্যাদি। আবেগের বিষয় দিনগুলো এখন সোনালী অতীত।

স্কুলে থাকতে ডিসেম্বরের এই সময় পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে দিত। ভালো ফলাফল করায় মাথায় থাকত না বাড়তি চাপ। তাই পুরো দমে ছুটির দিনগুলো উপভোগ করাই ছিল ছিল মূল লক্ষ্য । আর বিজয় দিবস আসলে সেই আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যেত। কেননা স্কুলে তখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করত।

আরও পড়ুন: বিজয়ের ৫২ বছর

দেশাত্মবোধক গান, নাচ, আবৃত্তি, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, অতিথিদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কথা শোনা এভাবেই কেটে যেত দুপুর পর্যন্ত। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করতাম বটে। বিজয় দিবস নিয়ে রচনা লিখে পুরস্কার পেয়েছি কয়েকবার। সেই পুরস্কার প্রধান অতিথির হাত থেকে নেওয়ার অনুভূতি ছিল খুবই ভালো।

বাসায় ফেরার পথে মহল্লার খেলনার দোকান থেকে দুই টাকায় কিনতাম এক বান্ডিল পতাকা। তারপর পুরো ঘরে সেই পতাকা সুতোয় বেধে ঝোলানো। শুধু যে বাসায় কাগজের পতাকা ঝোলানো হতো এমনটি নয়, রাস্তার ধারে, বিভিন্ন দোকানপাটে, খোলা মাঠের উপর দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে পতাকা টাঙ্গানো হতো। সেই সঙ্গে মহল্লা জুড়ে বাজত বিজয়ের গান।

এছাড়াও বিজয় দিবসের খুশিতে স্কুল-কলেজ , মহল্লায় উদ্যোগ নিয়ে খাবারের আয়োজন করা হতো। রান্না শেষে প্যাকেট করে সমাজের মাঝে বিলির কাজ করত বেশ কিছু তরুণ। তাছাড়া প্রায় ঘরেই রান্না হতো মুখরোচক খাবার। সব কিছু মিলে দিনটি ছিল ঈদের আনন্দের মতো।

তবে বর্তমানে কাগজের পতাকা কেনার দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। রাস্তার দুধারে দড়িতে ঝোলানো ছোট পতাকার বদলে চোখে পড়ে লাল-সবুজ বাতির আলোকসজ্জা। সখের বসে যারা নিজ হাতে পতাকা লাগাতো তারাও এখন প্যান্ডেলের লোকদের উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ বিজয় দিবসের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ঘরে কাটাচ্ছে গোটা দিন। অথচ এমন দিন আসবে কখনো ভেবে দেখিনি।

আরও পড়ুন: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস/ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড

এছাড়া প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বরকে ঘিরে যেই বিষয়টি অনেক সমালোচনার জন্ম দেয় তা হচ্ছে আজ বিজয় নাকি স্বাধীনতা দিবস। বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণী এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। এছাড়াও কোনো কোনো স্কুল-কলেজে দেশাত্মবোধক গান-নাচ করার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি সংস্কৃতির চর্চা করে পড়ছেন তোপের মুখে।

আমরা এই সব সমস্যাবলীর কারণ হিসেবে ধরতে পারি নিজ দেশের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন না হওয়া। তাই আমাদের সবার উচিত মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস জানা, বোঝা এবং সেই অনুযায়ী আমল করে দিবসসমূহ উদযাপন করা।

এছাড়াও তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস জানাতে পাঠ্য বইয়ে তা তুলে ধরার পাশাপাশি মানসম্মত মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নাটক , সিনেমা বানাতে হবে। কেননা বর্তমান প্রজন্ম নাটক, সিনেমায় আগ্রহ বেশি দেখায়। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘মুজিব:দ্য মেকিং অব নেসন’ মুভি অনন্য উদাহরণ হিসেবে আমরা ধরতে পারি। এছাড়াও পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি পারে প্রাণবন্ত বিজয়কে ফিরিয়ে আনতে।

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।