কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির প্রাচুর্য

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ২৭ আগস্ট ২০২৩

কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সম্পাদক। তাঁর মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য, তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিৎকর পরিবেশে।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। জন্মের পর বাবা-মা আদর করে ‘দুখু মিয়া’ নামে ডাকতেন। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামি শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তাঁর মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দি করে। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।

বিংশ শতাব্দির বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তাঁর মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহ, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় একশ বছর ধরে বাঙালির মানসপীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে।

উল্লেখযোগ্য রচনাবলি

রণ সংগীত: চল্ চল্ চল্।

ছোটগল্প: ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলি মালা।

উপন্যাস: বাঁধন হারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা।

কবিতা: অগ্নিবীণা, প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, বিদ্রোহী, মানুষ, কামাল পাশা, খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু, আনোয়ার, রণভেরী, কোরবানী ও মোহররম।

জনপ্রিয় গান: আমার আপনার চেয়ে, রুম ঝুম বাদল আজি, এত জল ও-কাজল, একি অসীম পিয়াসা, বসিয়া বিজনে কেন, আমায় নহে গো ভালবাস, ফুলের জলসায় নীরব, ফাগুন রাতে ফুলের নেশায়, স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর, নদীর নাম সই অঞ্জনা ইত্যাদি।

গজল: গান, গল্প, কবিতার পাশাপাশি নজরুল অসংখ্য গজল রচনা করেছেন। এর মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গজল হলো- তাওহীদেরই মুর্শিদ আমার, এই সুন্দর ফল সুন্দর ফল, হেরা হতে হেলে দুলে, মসজিদেরই পাশে আমায়, তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে ইত্যাদি।

হামদ ও নাত: তাঁর লেখা কিছু হামদ ও নাত হচ্ছে- আল্লাতে যার পূর্ণ ঈমান, আয় মরু পারের, এ কোন মধুর, আমি যদি আরব, বিশ্ব-দুলালী নবী নন্দিনী, আল্লাকে যে পাইতে, নবী মোর পরশমনি, ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ ইত্যাদি।

পুরস্কার: কাজী নজরুল ইসলাম জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, পদ্মভূষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি লাভ করেন।

নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়।

এছাড়া সরকারিভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।

১৯৪২ সালে কাজী নজরুল মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তাঁর সব সক্রিয়তার অবসান হয়। মৃত্যু পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।

বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ১৯৭২ সালে তাঁকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৬ সালে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। সে বছর ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

কেএসকে/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।