নরখাদক হিসেবে পরিচিত যে উপজাতি
একবিংশ শতাব্দীতে এসে পৃথিবীর কোথাও অন্ধকার থাকে না। অর্থাৎ প্রযুক্তির কল্যাণে সব জায়গাই আলোকিত। বিশ্বের যে প্রান্তে যা ঘটছে; তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকেন সবাই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় রঙিন ও সভ্য হয়েছে জাতি।
মানুষের খাবার, পোশাক, রীতিনীতি সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। মানুষ বুঝতে শিখেছে ভালো-মন্দ। তবে জানলে অবাক হবেন, আধুনিকতার এসব কোনো খবরই জানেন না অনেক জাতি। তারা এখনো তাদের হাজার হাজার বছরের পুরোনো রীতিনীতি পালনেই ব্যস্ত।
আরও পড়ুন: সৌন্দর্য বাড়াতে ঠোঁট কেটে মাটির চাকতি বসান যে নারীরা
এমনই এক জাতির বাস পাপুয়া নিউগিনিতে। যারা এখনো স্বজনের মৃতদেহের মাংস-ঘিলু খায়। মানুষখেকো অনেক জাতির কথাই জানা যায় ইতিহাস থেকে। তবে এখন তারা বিলুপ্ত। তাদের নতুন প্রজন্ম মিশে গেছে আধুনিক সভ্য সমাজে। বদলেছে তাদের খাদ্যাভ্যাস। তবে ফোর উপজাতিরা এখনো রয়ে গেছে তাদের নিজস্ব পৃথিবীতে। যেখানে অন্যদের প্রবেশের অনুমতি নেই।
সাংস্কৃতিক এবং জৈবিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত পাপুয়া নিউগিনি। এই উপত্যকাতেই রয়েছে এমন এক উপজাতি যা নরখাদক হিসেবেই পরিচিত। ফোর নামের এই বিশেষ উপজাতির বাস দেশের পূর্বাঞ্চলে। তারা সাধারণত নির্জনেই থাকতে পছন্দ করেন। মানুষের মস্তিষ্ক ও মাংস অত্যন্ত পছন্দের খাবার এই জাতির। তবে সেটাও আবার পরিবারের মানুষের। এটি তাদের অনেকটা নেশার মতো।
যখনই ফোর উপজাতির কেউ মারা যেত, তারা তাদের প্রিয়জনকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের মৃতদেহ খেয়ে নিত। মৃতদেহের মস্তিষ্কের মাংস শিশু এবং নারীদের জন্য নির্ধারিত। শরীরের বাকি অংশের মাংস খায় পুরুষরা। কত বছর ধরে তাদের এই রীতি চলে আসছে তার সঠিক হিসাব নেই। ফোর জাতিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এভাবেই প্রিয়জন মারা গেলে তার মাংস এবং মস্তিষ্ক খেয়ে নেয়।
আরও পড়ুন: স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গেই বছরের পর বছর ঘুমান তারা
তবে মৃতদেহের মস্তিষ্ক খাওয়ার ফলে তাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। দেখা দেয় এক ভয়ংকর রোগ যার নামা কুরু। কুরু নামের এই বিশেষ রোগে আক্রান্ত হন এই উপজাতির বেশিরভাগ মানুষই। সাইন্স নেচারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, গবেষকরা জানান এই রোগের কারণে তাদের শরীরে একটি বিশেষ অনুর প্রতি অনাক্রম্যতা তৈরি করে। এই অনু কুরু, ম্যাড কাউ ও ডিমেনশিয়া রোগের প্রধান কারণ। এছাড়াও এই উপজাতির জিনে অন্যান্য অনেক পরিবর্তনও লক্ষ করা যায় যা মানুষের সাধারণ জিন থেকে একেবারেই আলাদা।
বছরে প্রায় ২ শতাংশ মানুষ মারাও যায় এই রোগের কারণে। এছাড়া ডিমনেশিয়াসহ নানান সমস্যা দেখা দেয় তাদের। ১৯৫০-এর দশকে এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয় এবং তারপর থেকেই কুরু মহামারি হ্রাস পেতে থাকে। এর জন্য কাজ করেছেন অনেক গবেষক দল।
বিশেষজ্ঞরা তাদের পরীক্ষা করে জানতে পারেন বছরের পর বছর ধরে মৃতদেহের মস্তিষ্ক ও মাংস খাওয়ার ফলে তাদের এই রোগ দেখা দিত। তবে ফোরদের এই অভ্যাস বদলাতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বিশেষজ্ঞদের। ফোর জাতির নরমাংস খাওয়া বাদ হলেও সভ্য সমাজে ফিরে আসেনি তারা। নিজেদের পৃথিবীতেই বসবাস তাদের।
সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন, অ্যানসাইন্ট অরিজিন
কেএসকে/জেআইএম