খেলার সময়েও পকেটে থাকত স্মৃতিময় গুলতি

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২৩

গাছের ডালে ঝুলছে অসংখ্য আম। উপরে ওঠার এতো সময় নেই। তাই গুলতি দিয়েই আম পাড়া হচ্ছে অভিনব কায়দায়। ঠিক ঠাক নিশানা লাগলেই গাছ থেকে টপাটপ পড়ছে কাঁচা মিষ্টি আম। বলছিলাম নব্বই দশকের জনপ্রিয় একটি খেলনার নাম। আসলে খেলনা না বলে অস্ত্র বললেও ভুল হবে না। ইংরেজি ‘Y’ অক্ষরের মতো দেখতে গুলতি দেশীয় অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার হতো। শিশু-কিশোরদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় এই গুলতি এখন অতীত।

অথচ নব্বইয়ের দশকে ঘুড়ি, লাটিমের পাশাপাশি গুলতির চাহিদাও ছিল ব্যাপক। শিশুরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো গুলতি কেনার জন্য। বর্তমান প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীরা হয়তো জানেন না গুলতি কি! তারা জানে না এটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। ইন্টারনেটের যুগে গুলতির নামও বিলীনের পথে।

খেলার সময়েও পকেটে থাকত স্মৃতিময় গুলতি

আরও পড়ুন: বইপত্রে সীমাবদ্ধ নব্বই দশকের খেলা লাটিম

গুলতি কিনতে যে সব সময় টাকা লাগতো এমনটি নয়। যারা বানাতে জানতো তারা বিনা খরচে নিজের মন মতো গুলতি বানিয়ে ফেলতো। তারপর ছোট নুড়ি পাথর, ইটের টুকরা, মার্বেল দিয়ে নিক্ষেপ করতো কাঙ্খিত বস্তুটির দিকে। দূরে নিক্ষেপ করে শক্তির পরীক্ষা করা, মৌচাক ভাঙা, সেই সঙ্গে আম, জাম, বরই পাড়া ইত্যাদি কাজে গুলতির বিকল্প ছিল না।

সে সময়ের জনপ্রিয় এই গুলতি তৈরি করতে প্রয়োজন হতো গাছের ডাল। সচরাচর পেয়ারা, জাম, বেল ইত্যাদি গাছের ডাল দিয়ে দোডালা তৈরি করা হতো। কিছুটা ইংরেজি ‘Y’ অক্ষরের মতো। এরপর ‘Y’ এর দুই প্রান্তের সঙ্গে রাবারের ফিতা বা সাইকেলের টিউব বেঁধে দেওয়া হতো। এদিকে রাবারের ফিতার মাঝখানে চামড়া বা রেক্সিনের চওড়া টুকরো রাবারের নলের সঙ্গে সুতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হতো। যেটা ইট বা মার্বেল রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এরপরেই গুলতি প্রস্তুত।

খেলার সময়েও পকেটে থাকত স্মৃতিময় গুলতি

আরও পড়ুন: বাংলার ঐতিহ্য বায়োস্কোপ নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা

দিন বদলেছে। গুলতির চাহিদা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কিশোর-কিশোরীদের চাহিদায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শহরে তো বটেই গ্রামেও এখন শিশুদের কাছে গুলতি দেখা যায় না। অনলাইন গেম , টিকটক, পাবজি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা আসক্ত এখন। তাই গুলতি চালানোর কৌশলও জানে না তরুণ প্রজন্ম।

হরহামেশা দেখতে পাওয়া গুলতি এখন তেমন নেই। সচরাচর দোকানেও কিনতে পাওয়া যায় না। তবে কিছু গ্রামাঞ্চলে এখনো গুলতি ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করছে। যাদের ছোটবেলা গুলতির সঙ্গে কেটেছে তারা জানেন গুলতির সঙ্গে কাটানোর দিন কেমন ছিল। নদীতে মাছ ধরা, ঘুড়ি উড়ানো, সাঁতার কাটা, ড্যাংগুলি খেলার সময়েও পকেটে থাকতো স্মৃতিময় গুলতি। যখনই কোনো বাগান বা গাছের পাশ দিয়ে যাওয়া হতো যে কোনো ফল দেখলেই তা গুলতি দিয়ে পেড়ে সবাই মিলে খেতে খেতে আবার শুরু হতো পথচলা।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।