বইপত্রে সীমাবদ্ধ নব্বই দশকের খেলা লাটিম

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ০১ জুলাই ২০২৩

নব্বই দশকের খুবই জনপ্রিয় একটি খেলা লাটিম। গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গায় প্রচলন ছিল এই খেলার। সকাল, বিকেল খেলার মাঠে বা বাড়ির উঠানে দড়ি পেঁচিয়ে লাটিম ঘোরাতে দুরন্তপনায় মেতে থাকা একদল কিশোর।

তাদের সময় ভিডিও গেমের চাহিদা ছিল না। ছিল না পাবজি কিংবা ফ্রি ফায়ার। তাদের শখ ছিল টাকা জমিয়ে কিংবা বাবার কাছে বায়না ধরে লাটিম কিনবে। কারণ লাটিম ছিল তাদের কাছে নেশার মতো। সারাদিন লাটিম খেলায় মেতে থাকত কিশোররা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে সেই লাটিম। উঠানে কিংবা স্কুলের মাঠে দেখা যায় না সেই কিশোরদের লাটিম খেলা। নতুন প্রজন্ম ব্যস্ত অনলাইন গেমসের নেশায়। লাটিম কিংবা শারীরিক কসরতের খেলাধুলা থেকে স্মার্টফোন, ওয়াইফাইতেই আগ্রহ তাদের।

আরও পড়ুন: বাংলার ঐতিহ্য বায়োস্কোপ নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা

তবে লাটিম খেলায় ছিল ভিন্ন রকম আনন্দ। চাইলে একা যেমন খেলা যায় তেমনি দলগতভাবেও খেলা যায়। সবাই মিলে খেললে লাটিমে লাটিমে লাগে প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী খেলোয়াড় হেরে যাওয়া খেলোয়াড়ের লাটিমের মালিক হয়।

সচরাচর কাঠমিস্ত্রিরা লাটিম বানিয়ে বিক্রি করতেন। সাধারণত পেয়ারা ও গাব গাছের ডাল দিয়ে এ লাটিম তৈরি করতো। অনেক প্রতিষ্ঠান খেলার সামগ্রী হিসেবে কারিগর দিয়ে বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতো। লাটিম ঘোরাতে যে চিকন ফিতা বা দড়ির ব্যবহার করা হতো, সেগুলোও আলাদা করে কিনতে হতো। তবে অনেক সময় লাটিমের সঙ্গেই দেওয়া হতো এই ফিতা। নির্বাচিত পাট থেকে লাটিমের জন্য লতি বা ফিতা বানানো হতো।

বইপত্রে সীমাবদ্ধ নব্বই দশকের খেলা লাটিম

লাটিম খেলার প্রতিযোগিতায় অন্যের লাটিম ক্ষতবিক্ষত করার প্রতিযোগিতাও চলে। যে যতবার নিজের লাটিমকে ঘুরিয়ে অন্যের লাটিমকে আঘাত প্রাপ্ত করতে পারবে সে সেরা খেলার বনে যেত। অনেক সময় লাটিম ভেঙে যায়। তবে প্রতিযোগিতার মাঝে ভাঙলে কেউ কারও দোষারোপ করতে পারত না। উল্টো যে ভাঙলো সে বাহবা পাবে। তাই সুঁচালো আল যুক্ত লাটিম সবার পছন্দের। এছাড়াও লাটিম দীর্ঘ সময় কে ঘোরাতে পারে সেই প্রতিযোগিতাও চলতো। লাটিম ঘুরিয়ে অজানা কায়দায় হাতের তালুতে রাখার দৃশ্যও উপভোগ্য।

চার হাজার বছর আগেও লাটিম ছিল মানুষের খেলার অন্যতম সামগ্রী। তবে এই লাটিম বর্তমানে বাজারে খুঁজে পেতেও কষ্ট হয়। তবে ঈদের দিন, গ্রামীণ মেলা কিংবা মফস্বল বাজারে দেখা মেলে এই লাটিমের। রংবেরঙের লাটিম। দেখলেই ফিরতে মন চাইবে শৈশবে।

আরও পড়ুন: সেই হাঁক-ডাক নেই কটকটি বিক্রেতাদের

দিন বদলেছে। বইপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ লাটিম খেলা। বাজারে লাটিমের বিক্রিও তেমন নেই। ঘরবন্দি জীবনে স্মার্টফোন শিশু-কিশোরদের কাছে সব। তবে এখনো গ্রামাঞ্চলে গেলে প্রায় সময় দেখা যায় লাটিম খেলায় ছোটদের মেতে উঠতে। এ যেন অন্যরকম আনন্দ।

তবে দেশ থেকে লাটিম খেলার চল বিলুপ্তপ্রায় হলেও বিশ্বের অনেক দেশে এখনো লাটিম জনপ্রিয় খেলা। চীনে লাটিম ঘোরানো অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। তবে শীতের সময় বরফের উপর লাটিম ঘোরানো এবং প্রতিযোগিতা চীনের খুব পরিচিত এক দৃশ্য।চীনের বিভিন্ন প্রদেশে লাটিম খেলার নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যেমন-দূরে খুঁটির মাথায় রাখা ছোট্ট বাটির মধ্যে লাটিম ছুঁড়ে ফেলা, লাটিম উড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। এমনকি অনেক ভারী বিশালাকৃতির লাটিম ঘোরানোও চীনের আরেকটি জনপ্রিয় স্টিট গেম।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের চিকো শহরে প্রতি বছর লাটিম প্রতিযোগিতার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হয়। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোতে আয়োজন করা হয় লাটিম প্রতিযোগিতার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।