যেভাবে ব্যয় হয় পাগলা মসজিদের দানের টাকা

এসকে রাসেল
এসকে রাসেল এসকে রাসেল , জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:৪৬ পিএম, ২৬ জুন ২০২৩

মুসলিম ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এক জনপদ ঢাকা বিভাগের অন্যতম জেলা কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত প্রায় আড়াইশ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এ মসজিদটিতে আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুললেই চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় হয়। বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ আয়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এই মসজিদ। তাই এ মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা।

প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যের বিখ্যাত নানা দর্শনীয় স্থান রয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ তারই সাক্ষ্য বহন করে। মসজদটি শহরের পশ্চিম পাশে হারুয়া নামক এলাকায় নরসুন্দা নদীর কোলঘেঁষে গগনচুম্বী মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই শতাব্দী পুরোনো ইতিহাস হয়ে।

মসজিদটিতে রয়েছে আটটি লোহার দানবাক্স। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সগুলো খোলা হয়। বরাবরই দানবাক্সে পাওয়া টাকার পরিমাণ দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ হয়। কারণ প্রতিবারই আগের টাকার রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ডের জন্ম হয়। এজন্য দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোয় উঠে আসে মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার তথ্য এবং বিভিন্ন রকমের দান ও মানতের চিত্র।

দানবাক্স থেকে নিয়মিত নগদ ৪ কোটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও হীরার গহনা এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যালংকারও পাওয়া যায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এলাকা, দেশের দূর দূরান্ত থেকে আসা এমনকি বিদেশি পর্যটকদের মকসুদ (মনের আশা) পূরণের বিশ্বাস থেকে দেওয়া মানতের টাকা ও মূল্যবান অলংকারে কিছুদিনের মধ্যেই ভরে ওঠে আটটি দানবাক্স। এছাড়া মসজিদটিতে দান করা হয় গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ প্রচুর গবাদিপশুও।

আরও পড়ুন: গ্রাহক খরায় স্টুডিও বাণিজ্য

বিশ্বাস থেকে সব ধর্মের মানুষ পাগলা মসজিদে দান করে থাকেন। মসজিদে মানত করতে আসেন কবিতা রাণী নামে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। তিনি বলেন, কিছুদিন পূর্বে তার বোন এখানে মানত করেন। পরে তার মনের আশা পূর্ণ হয়েছে। তাই তিনি এখানে মানত নিয়ে এসেছেন।

ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পাগলা মসজিদে মানত করতে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী সুজিতা বর্মন জানান, তার মেয়ে যাতে লেখাপড়ায় ভালো করতে পারে তাই তিনি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে মানত করতে এসেছেন। তার বিশ্বাস এই মসজিদে দান করলে তার মনবাসনা পূর্ণ হবে।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ অর্থের লভ্যাংশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মানবকল্যাণসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও সুষ্ঠু তদারকির জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসককে সভাপতি, পৌরসভার মেয়র এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে সহসভাপতি এবং গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, নেজারত ডিপুটি কালেক্টর (এনডিসি), সদর মডেল থানার ওসি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি গঠিত। সুশীল সমাজের পক্ষে একজন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া রয়েছে ওয়াকফ স্টেটের অডিটর কর্তৃক সাংবাৎসরিক অডিট ব্যবস্থা। বর্তমানে এটি পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স নামে পরিচালিত হচ্ছে।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও প্রাচীর চোখে পড়বে। এছাড়া হয়েছে শৈল্পিক আলোকসজ্জার। এ শৈল্পিক ও নয়নাভিরাম আলোকসজ্জা দেখতে রাতের বেলা ভিড় জমে হাজারো দর্শনার্থীর।

এ মসজিদে নারীদেরও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। নারীরা মসজিদের পৃথক স্থানে নামাজ আদায় করেন। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে প্রচুর লোকসমাগম হয়। সেদিন দান-খয়রাতও বেশি করেন লোকজন। এছাড়া প্রতি মাসে প্রায় ১৫০ মণ বাতাসা বিক্রি করা হয়, যা থেকে আসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: সেই হাঁক-ডাক নেই কটকটি বিক্রেতাদের

জানা যায়, মানবকল্যাণসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে পাগলা মসজিদের দানের বিপুল পরিমাণ অর্থের লভ্যাংশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয়ে আসছিল। তবে কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নকাজে টাকা বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। কারণ পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সেকে আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামিক কমপ্লেক্সে নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মসজিদ পরিচালনা কমিটি।

২০২১ অর্থবছরে ১২৪ জন দুরারোগ্য ব্যধিতে (ক্যানসার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি রোগ, প্যারালাইসিস ইত্যাদি) আক্রান্ত দরিদ্র ও দুস্থকে চিকিৎসার জন্য এবং দরিদ্র ও দুস্থ মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ বাবদ ১৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা পাগলা মসজিদ থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আর প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, শহরের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের দেওয়ান আয়েশা আক্তারের ওয়াকফ করে দেওয়া ১০ শতাংশ জমির ওপর পাগলা মসজিদের গোড়াপত্তন হয়। বর্তমানে প্রায় চার একর জমির ওপর মসজিদ কমপ্লেক্স এবং তিন একর জমির ওপর পাগলা মসজিদ গোরস্তান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মসজিদের ব্যয়ে ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা। আর এ বিপুল আয়-ব্যয় প্রতিবছর ওয়াকফ স্টেটের অডিটর কর্তৃক নিয়মিত নিরীক্ষা করা হয়। বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে অডিট করা হয়। অডিট কাজ করেন জেলা ওয়াকফ স্টেটের পরিদর্শক।

দানবাক্স খুললেই মেলে কোটি কোটি টাকা
সর্বশেষ চার মাস পর গত ৬ মে দানবাক্স খোলা হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে গণনা। দানবক্সগুলোতে পাওয়া যায় রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা ও হীরার গহনা এবং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণ-রৌপ্য। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২০টি বস্তায় তখন রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। দানবাক্স খোলার পর কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দায়িত্বশীল লোকজনের উপস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা, মসজিদ কমপ্লেক্সের মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০০ জন টাকা গোনার কাজে অংশ নেন।

এসব টাকা ব্যয় হয় যেসব খাতে
মসজিদ কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠিত নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মো. আব্দুল কাদির বলেন, পাগলা মসজিদের অর্থে এই মাদরাসার ১৩০ জন অসহায়, পিতৃ-মাতৃহীন এতিম শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। প্রতি মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা শুধু শিক্ষার্থীদের খাবারের পেছনে ব্যয় হয়। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ভরণপোষণ ব্যয়ও নির্বাহ করা হয় মসজিদের দান থেকে পাওয়া অর্থে। প্রতিবছরই মসজিদের অর্থায়নে নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয় তাদের।

যেভাবে ব্যয় হয় পাগলা মসজিদের দানের টাকা

পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাবেক আনসার-ভিডিপি অফিসার মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এ মসজিদ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব এক সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও বেশি সময়ের বলে জানা যায়। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন এ কমপ্লেক্সটিতে। প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ অর্থের লভ্যাংশের একটি বিশেষ অংশ দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত দরিদ্র, অসহায়-দুস্থ ও এতিম মানুষের চিকিৎসার জন্য এবং এ ধরনের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়।

২০২১ অর্থবছরে ১২৪ জন দুরারোগ্য ব্যধিতে (ক্যান্সার, ব্রেনস্ট্রোক,হার্ট স্ট্রোক, কিডনি রোগ,প্যারালাইসিস ইত্যাদি) আক্রান্ত দরিদ্র ও দুস্থকে চিকিৎসার জন্য এবং দরিদ্র ও দুস্থ মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ বাবদ ১৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা পাগলা মসজিদের ফান্ড থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থাপত্য হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। পাঁচ হাজার নারীর জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বলেন, পাগলা মসজিদে সব ধর্মের মানুষই তাদের মনের আশা পূরণের জন্য দান করে থাকেন। এমনকি রাতের আঁধারে অনেক মানুষ এসে দানের টাকা দানবক্সে দান করে যায়। পাগলা মসজিদের এ বিপুল অর্থ সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৯৭৯ সালে তদানীন্তন এসডিও পরবর্তীতে এখানে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান পাগলা মসজিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়াকফ করে নিয়ে প্রশাসন ও সুশীল সমাজের লোকজনকে দিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন। তখন থেকেই পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার পর হিসাব করে বিপুল পরিমাণ অর্থ মিলতে থাকে।

পাগলা মসজিদ নিয়ে জনশ্রুতি
জনশ্রুতি রয়েছে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম ও হিন্দু নির্বিশেষে সবার যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী।

যেভাবে ব্যয় হয় পাগলা মসজিদের দানের টাকা

পাগলা মসজিদ নিয়ে প্রবীণদের কথা
কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জানান, বারো ভূঁইয়াপ্রধান মসনদে আলা বীর ঈশা খাঁর ষষ্ঠ পুরুষ শহরের হয়বত নগরের জমিদার দেওয়ান হয়বত দাদ খানের ভ্রাতুষ্পুত্রই ছিলেন কামেল পাগলা পীর। আর তার নাম ছিল দেওয়ান জিলকদ দাদ খান। তিনি সংসার ও শানশৌকত ত্যাগ করে নরসুন্দা নদীর মাঝপথের একটি ছোট্ট ঘরে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। কিন্তু ওই আধ্যাত্মিক সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশ-বিদেশের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।

মানত বা দান করলে গোপন বাসনা পূরণ হয়, এমন বিশ্বাস থেকে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে নারী-পুরুষরা মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা টাকাপয়সা, স্বর্ণ-রুপার পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার মানত নিয়ে বেশি আসেন নারী-পুরুষরা।

পাগলা মসজিদের সেবায় আছেন যারা
পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স ও মাদরাসার সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন ১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ১ খতিব, ১ পেশ ইমাম, ৩ মুয়াজিন, ৭ শিক্ষক, ১ অফিস সহকারী, ১ সিসিটিভি ও কম্পিউটার অপারেটর, ২ বাবুর্চি, ৮ পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ১০ আনসার ও নিজস্ব ১৩ জন নিরাপত্তাকর্মী। বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন এ কমপ্লেক্সটিতে।

পাগলা মসজিদের নিরাপত্তা
পাগলা সমজিদ কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার জন্য মসজিদটি ৬০টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া ১০ সদস্যের সশস্ত্র আনসার টিম সর্বদা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। মসজিদটির সার্বিক তদারকির জন্য ৩৪ সদস্যের একটি দল কাজ করে।

বিগত আইড় বছরে যে পরিমাণ টাকা জমা পড়েছে দানবাক্সগুলোতে
২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্সগুলো খুলে পাওয়া গেছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা, এরপর ১৯ জুন পাওয়া গেছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ টাকা, একই বছরের ৬ নভেম্বর পাওয়া গেছে রেকর্ড পরিমাণ ৩ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকা। পরে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ পাওয়া গিয়েছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা, ৩ জুলাই পাওয়া গিয়েছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা, একই বছরের ২ অক্টোবর পাওয়া গিয়েছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। ২০২৩ সালে ৭ জানুয়ারিতে পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। সর্বশেষ ৬ মে দানবাক্সগুলোতে পাওয়া যায় রেকর্ড ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।