বাবা, আস্থা ও নির্ভরতার শেষ ঠিকানা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৮ পিএম, ১৮ জুন ২০২৩

মাঈন উদ্দীন রুবেল

বাবা মানে স্নেহ, ভালোবাসায় আগলে রাখার এক মহান ব্যক্তিত্ব। বাবা মানে হৃদস্পন্দন, আস্থা, নির্ভরতা ও ভালোবাসার শেষ আশ্রয়স্থল। বাবা ছেলে-মেয়ের জন্য অমূল্য সম্পদ। বাবা নামক বটবৃক্ষ ছায়া হয়ে পাশে থাকলে মনে হয় যেন বিশ্বটা জয় করা খুব সহজ।

বাবা হচ্ছেন একজন ছেলে-মেয়ের উন্নতির শিখড়ে পৌঁছানোর জন্য আর্থিক, মানসিক, প্রেষণা, সাহস ও উৎসাহ পাওয়ার শক্তি। বাবা এমন একজন মহান পুরুষ যিনি নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের সুখের কথা চিন্তা করে দিন-রাত পরিশ্রম করেন। পরিবার ও সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন। বাবারা নিজে না খেয়ে ছেলেমেয়েদের খাওয়ান, নিজে ভালো জামাকাপড় না পরে ছেলেমেয়েদের পরান।

ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে মানুষ করে তোলার নিরলস ও অবিশ্রান্ত ব্যক্তির নাম বাবা। ছেলেমেয়েদের যত আবদার সামর্থ্য অনুযায়ী পূরণ করার চেষ্টা করেন। বাবার সমতুল্য বসুন্ধরায় আর কেউ নাই। বাবা এক অতুলনীয় সম্পদ, যার প্রত্যেকটি কথা সন্তানদের জন্য উপদেশ ও অমিয় বাণী। বাবারা সবসময় ছেলে-মেয়েদের মঙ্গল কামনা করে।

বাবা ধনী হোক কিংবা গরিব সব বাবার ইচ্ছা থাকে তার ছেলে-মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করবেন, যারা পরবর্তীতে দেশ, জাতি, এলাকা ও পরিবারের উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রয়োজনে উচ্চ শিক্ষার অর্জনের জন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাঠান। কিন্তু যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই তারা অন্তত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। বাবারা এমনই হয় তারা তাদের শেষ সম্বলটা দিয়ে হলেও তাদের ছেলে-মেয়ে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রয়াস করেন। তবে বাবারা কখনো গরিব হোন না। তাদের স্বপ্ন থাকে বিশাল।

ছেলে-মেয়েদের অসুখ হলে মা-বাবার চোখে ঘুম থাকেনা, তারা সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত। বাবার আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক না কেন বাবা পাশে থাকলে আকাশের ন্যায় অসীম সাহস ও মনোবল তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু যার বাবা নেই সে বোঝে বাবা কত বড় অমূল্য সম্পদ ও ভালোবাসার মানুষ।

আরও পড়ুন: বাবার হাতের ‘হারকিউলিস’

বাবা হারিয়েছি আজ প্রায় দশ বছর, বাবা তার সারাটি জীবন পার করেছেন ছেলে-মেয়েদের তরে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে। আজ বাবাকে খাওয়াতে চাইলে বাবা নেই। বাড়িতে গেলে পুত বলে জড়িয়ে ধরার একজন নেই। বাবা বলে ডাকবো সেই শব্দটাও বাদ পড়ে গেল। প্রতিদিন, প্রতিরাত বাবার কথা মনে পড়ে। ছোটবেলায় একটু অসুস্থ হলে বাবা তার কাঁধে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত, রাত-দিন দেখতো না। কোনো রকম মান-অভিমান হলে, বাবা জড়িয়ে ধরলে সব অশান্তি ও চিন্তা দূর হয়ে যেত। প্রত্যেকটা ভালো কাজে সাহস যোগাতেন। বাবা না থাকা পরিবারের এক অপূরণীয় ক্ষতি। যার শূন্যতা কখনো পূরণ হয় না।

বাবার বলা কিছু মহামূল্যবান কথা আজো মনে পড়ে, ‘খেলায় মজিয়া শিশু কাটায়ও না বেলা, সময়ের প্রতি কভু করিও না হেলা, নদী কভু পান নাহি নিজ নিজ জল, তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল’ এমন বাক্যগুলো আজো অন্তরের কালিতে লেখা আছে। বাবা হারানোর ব্যথা আজো ভোলার নয়। প্রতি মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ে, তার উপদেশমূলক কথাগুলো বারবার হৃদয়ে নাড়া দেয়। বাবা শব্দটা বলে ডাকা আর সম্ভব নয়। আজ বাবা দিবসে বাবাকে খুব মনে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।

বাবা যেন শেষ বয়সে কারও বোঝা না হয়। তার জীবন-যৌবন যে ছেলেয়েদের লালন পালনে কাটিয়ে দেন। তার শেষ বয়সে যেন শেষ আশ্রয়স্থলটা পরিবারেই হয়, কোনো বৃদ্ধাশ্রম যেন না হয়। পৃথিবীর সব বাবা ভালো থাকুক, বাবা দিবসে সব বাবার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সালাম।

লেখক: লেখক, প্রাবন্ধিক ও ব্যাংকার

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।