সোনালু ফুলের সৌন্দর্যে বদলে গেছে মহাসড়ক

জাহিদ পাটোয়ারী
জাহিদ পাটোয়ারী জাহিদ পাটোয়ারী , কুমিল্লা কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ২৯ মে ২০২৩

দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফোর লেন বিভাজনে ফুটেছে অসংখ্য সোনালু ফুল। থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ রঙের এই ফুল। একনজর দেখেই মনে হবে ব্যস্ততম পিচঢালা এই সড়কে যেন হলুদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে প্রকৃতি। মনোরম দৃশ্যটি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এদের মধ্যে অনেকেই গাড়ি থামিয়ে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত শত কিলোমিটার সড়কে ঘুরে দেখা গেছে এমন মনোরম এমন দৃশ্য।

মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার রায়পুর, জিংলাতলী, গৌরিপুর, চান্দিনার কুটুম্বপুর, মাধাইয়া, নাওতলা, কুমিল্লা আদর্শ সদরের জাগুরজুলি, সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অধিকাংশ স্থানে ফুটেছে অসংখ্য সোনালু ফুল। হলুদ রঙের এই ফুলে আকৃষ্ট হচ্ছেন এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ সড়কের পাশে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কেউ আবার অনলাইনের জন্য নির্মাণ করছেন ভিডিও কন্টেইন।

দিলদার হোসেন পাভেল নামে চৌদ্দগ্রামের এক যুবক জাগো নিউজকে জানান, কুমিল্লার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেন তিনি। সে সুবাদে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সড়ক বিভাজনে গত একমাস ধরে ফুটেছে অসংখ্য সোনালু ফুল। যা যাত্রীদের নজর কাড়ার মতো। প্রতিদিন সকালে রঙিন রোদে সোনালু ফুলের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধকরে। দৃশ্যটি দেখে যে কারও মন নিমিশেই ভালো হয়ে যাবে।

feature

শাহ আলম মজুমদার নামে স্টার লাইন পরিবহনের এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রামের পদুয়া পর্যন্ত সড়কের মাজখানে লাগানো ফুল গাছগুলোতে অসংখ্য ফুল ফুটেছে। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের একসময়ের শিশু কিশোরদের জনপ্রিয় সোনালু ফুল দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। যাত্রাপথে আমি ভালোভাবেই উপভোগ করেছি’।

আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁত

তিনি আরও বলেন, ‘ফুল প্রকৃতিতে ও মানুষের মনে সুরভী ছড়ায়; আনন্দের দোলা দেয়। ফুল ভালোবাসেন না, এমন মানুষ দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। সোনালু ফুলের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর, যা এই মহাসড়কের বুকে ফুটেছে। আমি এই মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করি। দীর্ঘ একটা পথ ফুলের সুবাস নিয়ে ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে ভ্রমণ আমাকে আনন্দ দেয়’।

কুমিল্লার উদ্ভিদবিজ্ঞানী সামসুল আরেফিন বলেন, সোনালুর ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার’ ও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্যাসিয়া ফিস্টুলা’। মধ্যম আকৃতির সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। সোনালুর ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। এটির পুংকেশর দশটি এবং দীর্ঘ মঞ্জুরি দণ্ড আছে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে। গ্রীষ্মকালের বৈশাখে নতুন পাতা গজায়। প্রকৃতিতে শোভাবর্ধনে সোনালুর জুড়ি নেই। এর উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। সোনালু ওষুধি বৃক্ষের তালিকাভুক্ত গাছ। সোনালু গাছের পাতায় ও বাকলে ওষুধি গুণাগুণ আছে। বিশেষ করে, এর ফল বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে কাজ করে। এটি ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রামের বাগানে আগে এটি বেশি হতো। এখন উঁচু এলাকার মাটিতে এটি হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়ক বিভাজকে ফুটে থাকা সোনালু ফুলগুলো মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।

feature

তিনি আরও বলেন, শুধু মহাসড়ক নয়, দেশের সব সড়কের পাশেই বন বিভাগের উদ্যোগে ওষুধি ও ফলজ গাছ লাগানো উচিত। এছাড়া জনসাধারণকেও সবুজ বনায়ন গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন সংগঠক।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কের সৌন্দর্য বর্ধন একপাশের আলো যেন অন্যপাশে এসে দুর্ঘটনা না ঘটায় সেজন্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুলসহ প্রায় ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এগুলোর উচ্চতা ২ মিটার থেকে ৫ মিটার।

এছাড়া সড়ক স্লোপে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকীসহ ওষুধি ও ফলজ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ পরিচর্যায় জন্য শ্রমিক রয়েছে, তারা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। বর্তমানে সোনালু ফুল ফুটে মহাসড়কের পরিবেশ আরও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। মহাসড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমরা আরও বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।