ঈদুল-ফিতর
শৈশবের ঈদ স্মৃতি জীবনের সঙ্গে গেঁথে আছে
রুবেল মিয়া নাহিদ
আমি গ্রামে বড় হয়েছি। তাই ঈদের আনন্দটা তখন ছিল অন্যরকম। একটা সময় ছিল, যখন অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। ব্যাকুল কন্ঠে সবাইকে জিজ্ঞেস করতাম, ঈদ আসতে আর কয়দিন বাকি? আমার বারংবার এই একই প্রশ্নে পরিবারের লোকজন রীতিমত বিরক্ত হয়ে যেত।
ঈদের আগে থেকেই আমরা ইফতার শেষে উঠানে দাঁড়িয়ে আনন্দে নাচতাম আর হইচই করতাম ‘ঈদের চাঁদ উঠবে’, ‘ঈদের চাঁদ উঠবে’ বলে। আর রাতে তো খুশিতে ঘুমই হতো না। এরপর চাঁদরাতে সন্ধ্যায় ইফতার শেষে সবাই দৌড়ে ঘরের পেছনের ছোট নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতাম পশ্চিম আকাশে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য। বড়রা আমাদের ধরে উঁচু করে দেখেতেন ঈদের চাঁদ।
টিফিনের দু’চার টাকা বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমা হলে তা দিয়ে ঈদ কার্ড কিনতাম। সেগুলোতে ঈদ সম্পর্কিত বিভিন্ন ছন্দ লিখে বন্ধুদের দিতাম। দেখা যেত, এত আগ্রহ করে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও দু-একজন ছাড়া আর কেউই আসত না। তখন তীব্র অভিমানে কিছুদিন কথা বলাও বন্ধ রাখতাম।
আরও পড়ুন: সাম্যের উৎসবে না হোক বৈষম্য
ঈদের কিছুদিন আগে কেনাকাটা শুরু করে দিতাম। ছোটবেলায় আমি সাধারণত কাপড়ের পিস কিনে দর্জি মামাকে দিয়ে ডিজাইন করেই জামা বানাতাম। বিভিন্ন রকমের গজ কাপড় কিনে আম্মু আমাকে টেইলার্সের কাছে নিয়ে যেতেন, কী ডিজাইনের জামা বানাবো বলার জন্য। তখন মনে হতো, বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হবো।
জামা বানাতে দিয়ে আসার পর থেকেই রাতে ঘুম হতো না। জামার চিন্তায়, কেমন হবে জামাটা! পরলে কেমন লাগবে! সবাই দেখে কী বলবে-এসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সব কেনাকাটা শেষ হয়ে যেত। জুতা, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, টুপি কেনাকাটার পর বাসায় এসে জুতা পরে বিছানার উপরে ট্রায়াল দিতাম। তখন শুরু হতো আবার জামা ট্রায়াল দেওয়া আর ক্ষণে ক্ষণে বের করে দেখা।
এসব অনেক যত্ন করে লুকিয়ে রাখতাম। আশেপাশে অনেকেই ছিল আমার বয়সী। ওরা সবাই ঈদের কেনাকাটা দেখানোর জন্য অনেক অনুরোধ করতো। লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরের আশপাশ দিয়ে, জানালা দিয়ে উঁকি মারতো। আমিও অবশ্য তাদের ঈদের জামা দেখার জন্য চেষ্টা করতাম। তবে শত অনুরোধেও কেউ কারওটা দেখাতাম না।
ফজরের আজানের পরই মাইকে বেজে উঠতো, ‘ঈদ মোবারক’, ‘ঈদ মোবারক’। তখনই ঘুম ভেঙে যেত আর অন্ধকারেই আলো দেখার চেষ্টা করতাম। ভোর হওয়ার আগেই আম্মু নতুন বিছানার চাদর বিছানোর জন্য ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিতেন।
তারপর নামাজ শেষে সারাদিন ঘুরে ঘুরে দিন পার করতাম। পাশাপাশি বড়দের সহযোগিতা করতাম। এমন আনন্দ বড় হওয়ার পর আর পাইনি। এখন ছোটরা আনন্দ করে, আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।
কেএসকে/জেআইএম