আজকের এই দিনে

পণ্ডিত রবি শঙ্করের জন্ম

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৬ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০২৩

পণ্ডিত রবি শঙ্কর একজন ভারতীয় বাঙালি সংগীতজ্ঞ যিনি সেতারবাদনে কিংবদন্তিতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মাইহার ঘরানার স্রষ্টা আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের শিষ্য রবি শঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ঐতিহ্য এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেন।

তার পূর্ণ নাম রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী, ঘরোয়া নাম রবু। ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্ম। সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। বড় ভাই উদয় শঙ্কর ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী। ঐ সময়টায় তিনি ছিলেন প্যারিসে।

রবি শঙ্কর ১৯৩০ সালে মায়ের সঙ্গে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে যান এবং সেখানেই আট বছর স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার বছর বয়স থেকেই রবি শঙ্কর বড় ভাইয়ের নাচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক। ঐ বয়স থেকেই তিনি অনুষ্ঠান করেছেন ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে।

১৯৩৮ সালে, আঠারো বছর বয়সে রবি শঙ্কর বড় ভাই উদয় শঙ্করের নাচের দল ছেড়ে মাইহারে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অমর শিল্পী আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। দীক্ষা গ্রহণকালে তিনি আচার্যের পুত্র সরোদের অমর শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খানের সংস্পর্শে আসেন। তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে সেতার-সরোদের যুগলবন্দী বাজিয়েছেন। গুরুগৃহে রবি শংকর দীর্ঘ সাত বছর সেতারে সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষাকাল পরিব্যাপ্ত ছিল ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত।

১৯৪৫ সালের মধ্যে রবি শঙ্কর সেতার বাদক হিসেবে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান। এসময়ে রবি শঙ্কর তার সংগীত সৃজনশীলতার অন্যান্য শাখায়ও পদচারণা শুরু করেন। তিনি সুর সৃষ্টি, ব্যালের জন্য সংগীত রচনা এবং চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন। এই সময়ের বিখ্যাত ধরত্রী কি লাল এবং নীচা নগর চলচ্চিত্র দুটির সংগীত রচনা ও সুরারোপ করেন। তিনি কবি ইকবালের সারে জাঁহাসে আচ্ছা কবিতাকে অমর সুরে সুরারোপিত করে ভারতীয় জাতীয় সংগীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

১৯৪৯ সালে রবি শঙ্কর দিল্লীতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। একই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বৈদ্য বৃন্দ চেম্বার অর্কেষ্ট্রা । ১৯৫০ হতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রবি শঙ্কর অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সংগীত সৃষ্টিতে ব্যাপৃত ছিলেন। এ সময়ে তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো সত্যজিৎ রায়ের অপু ত্রয়ী (পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার)।

১৯৫৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবি শঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের বাহক হিসেবে তার সেতারবাদনকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রথম তুলে ধরেন। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকায় সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি এডিনবার্গ ফেস্টিভালে এবং বিখ্যাত সংগীত মঞ্চ রয়াল ফেস্টিভাল হলেও বাজিয়েছেন।

১৯৬৫ সালে বীটলসের জর্জ হ্যারিসন সেতারের সুর নিয়ে গবেষণা শুরু করলে রবি শঙ্করের সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে তা বন্ধুত্বে পরিণত হয়। এই বন্ধুত্ব রবি শঙ্করকে অতিদ্রুত আন্তর্জাতিক সংগীত পরিমন্ডলে নিজস্ব অবস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

তার সংগীত জীবনের পরিব্যাপ্তি ছয় দশক জুড়ে। পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, ভারতরত্ন, ভারতের রাষ্ট্রপতি পদক, পোলার মিউজিক প্রাইজ, লিজিয়ন অব অনার, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক প্রদত্ত অনারারী নাইটহুড, গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড, ১৪টি সম্মানসূচক ডক্টরেট, দেশিকোত্তম, ম্যাগাসাসে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন।

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।