রঙের ছোঁয়ায় রঙিন জাবি ক্যাম্পাস

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২৩

ইমন ইসলাম
চলছে বসন্তকাল। চতুর্দিকে বইছে বসন্তের সুবাস। কচি পাতার মিষ্টি গন্ধে পুলকিত চারপাশ। গাছে গাছে চলছে উৎসবের আমেজ। আম গাছে আমের মুকুল, ফুল গাছে ফুটেছে রং বেরঙের নানান ফুল। ওইদিকে মৌমাছিরা ব্যস্ত মধু সংগ্রহে। তাদের গুনগুন শব্দে পুলকিত হচ্ছে তরুণ মন। পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের।

দীর্ঘ ক্লান্তিকর রাত্রির পরি-সমাপ্তি ঘটেছে। রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের বাতিগুলো তখনো জ্বলছে। ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে বিরাজ করছে শুনশান নীরবতা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে কুকুরের দল। এদিকে ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো যেন ঘাড় নেড়ে অভিবাদন জানাতে ব্যস্ত।

দেখে মনে হবে প্রকৃতি ও জীবন যেন এক জায়গায় এসে মিলেমিশে একাকার। যে অনুভূতি মানব মনে সৃষ্টি করে এক অদ্ভুত আলোড়ন। রাস্তার ধারে ধারে গড়ে ওঠা ঘন গাছপালার আচ্ছাদন ক্যাম্পাসের পরিবেশকে করেছে আরও সৌন্দর্য মন্ডিত।

সেই সৌন্দর্যে এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে পুরোনো দিনের টেলিফোন লাইন বক্সগুলো। শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে নতুন রূপে তারা। রঙের ছোঁয়ায় নির্জীব বক্সগুলো যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। লাল, নীল, হলুদ কালোসহ নানা রঙের ঝলকানিতে রঙিন হয়েছে সেই ক্যানভাস।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক, স্থাপত্যশিল্প, বাহারি কারুশিল্পের প্রায় সব উপাদানই খুঁজে পাওয়া যায় এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে। ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার আর্ট ও কারুশিল্পীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ও কারুশিল্পীরা ক্যাম্পাসকে নতুন এক রূপে ফুটিয়ে তুলছেন রং-তুলির আঁচড়ে। তাদের আঁকা চিত্রকর্মগুলোই ক্যাম্পাসের ফাঁকা দেয়ালগুলোকে করেছে রঙিন। গল্প বলছে কত শত।

রঙের ছোঁয়ায় রঙিন জাবি ক্যাম্পাস

অনেক তো হলো লোকজ নকশা আর বাংলা সাহিত্যের রং খেলার যুদ্ধ। চিত্র শিল্পীরা এবার আটঘাট বেঁধে নেমেছেন ভিন্ন আমেজের সন্ধানে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী পরিশ্রান্ত এসব টেলিফোন লাইন বক্সগুলো হারিয়েছিল তাদের চিরচেনা সেই রূপ ও সত্ত্বা। অর্ধমৃত বক্সগুলো নতুন রূপে সাজবে বলে যেন প্রহর গুনছিল।

প্রকৃতির মাঝে নান্দনিকতার মেলবন্ধন ঘটাতে রং-তুলি হাতে উপস্থিত একদল চিত্রশিল্পী। যাদের দুচোখ জুড়ে হাজারো কল্পনা আর ইচ্ছাশক্তি। পুরোনো জীর্ণ শীর্ণ বক্সগুলোর উপর তাদের সেই কল্পনা আর ইচ্ছাশক্তিকেই ফুটিয়ে তুলেছেন রং-তুলির আঁচড়ে।

দেখে মনে হবে যেন রঙেদের মেলা বসেছে সেখানে। সৌন্দর্য মন্ডিত বক্সগুলো নজর কাড়ছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের। কোনো বক্স সেজেছে স্প্যাইডারম্যান, কোনোটা আবার ব্যাটম্যান বা মিনিয়নস কার্টুন ক্যারেক্টারে। যা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ কেউ আবার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে মুগ্ধতা জানাচ্ছেন।

ব্যতিক্রমধর্মী এমন চিত্রকর্ম এঁকেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন আবদুল্লাহ মামুর। নিজেদের এমন উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ক্যাম্পাসের ফাঁকা দেয়ালগুলোতে ব্যাচের নাম, আজেবাজে লেখা আর মাত্রাতিরিক্ত পোস্টারে ঢাকা দেয়ালগুলো দৃষ্টিকটু ছিল। সেই দেয়ালগুলোকেই একটু দৃষ্টিনন্দন করার জন্যই মূলত আমাদের এই আয়োজন।

ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা টেলিফোন লাইনের বক্সগুলো রঙিন করার কথাটা অনেক বছর আগেই ভেবেছিলাম, কিন্তু আজ, কাল করে আর করা হয়ে ওঠেনি। এবার কয়েকদিনের জন্য ক্যাম্পাসে গিয়ে অলস বসে ছিলাম। কিছু করার না পেয়ে শেষমেশ এগুলোকেই রঙিন করে ফেললাম আমরা কয়েকজন মিলে, এভাবেই টেলিফোন লাইনের বক্সগুলো রঙিন করার শুরুর গল্প বলছিলেন আবদুল্লাহ মামুর।

রঙের ছোঁয়ায় রঙিন জাবি ক্যাম্পাস

তিনি আরও বলেন, কোনো বার্তা বহন করে এমন উদ্দেশ্যে ওগুলো আঁকা নয়। তবে ক্যাম্পাসের দেয়াল বা অন্য সব জায়গা পোস্টারে, ব্যাচের নাম, নিজের নাম কিংবা হাবিজাবি লিখে দৃষ্টিকটু না বানিয়ে এরকম রঙিন ঝকমকে করেও রাখা যায় সে বার্তাই দিতে পেরেছেন অন্যদের। এগুলো অন্তত চোখের শান্তি দেয়।

বিভিন্ন ধরনের পোস্টারে ঢাকা ছিল টেলিফোন বক্সগুলো। যা দেখতে ভীষণ দৃষ্টিকটু ছিল। এগুলো দেখতে যেন একটু দৃষ্টিনন্দন হয়, এজন্যই ওগুলো করা। বর্তমানে তিনটা বক্স করা হয়েছে। আরও অনেকগুলো এরকম বক্স আছে ক্যাম্পাসে। তবে সময় এবং রঙের অপ্রতুলতার কারণে সেগুলো করা হয়নি। মূলত একেকটা বক্স একেকটা চরিত্রের মতো বানিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য এরকম ডিজাইন সিলেক্ট করেছিলেন আবদুল্লাহ মামুর।

কাজগুলো করার সময়ে আবদুল্লাহ মামুরকে সহায়তা করেছে মিল্টন (৪৩ ব্যাচ), শান্ত (৪৪ ব্যাচ), সিক্ত (৪৫ ব্যাচ), মং (৪৭ ব্যাচ)। বাইরে থেকে কোনো স্পনসর নেননি তারা। নিজেদের টাকা দিয়েই মূলত রঙ কেনে। তবে ক্যাম্পাসের কেউ যদি নিজ থেকে রঙের খরচ দেয় তবে তা গ্রহণ করেন সাদরে। ক্যাম্পাসের বাইরের কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান দিতে চাইলেও নেন না তারা।

আবদুল্লাহ মামুর ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ করবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, এখন যেহেতু ক্যাম্পাসে আর থাকা হয়না, তাই আপাতত বলতে পারছি না যে ভবিষ্যতে এরকম কাজ করব কি না। কিন্তু যদি কখনো সময় হয়, যথেষ্ট সুযোগ পাই, তবে ইচ্ছা আছে ক্যাম্পাসে এরকম অনেক কাজ করার। সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।