রাজকীয় খেলা ‘ফেন্সিং’

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ঐশ্বর্য কিবরিয়া
যুদ্ধের কথা ভাবতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একঝাঁক সৈন্যের তরবারি নিয়ে যুদ্ধের দৃশ্য। প্রাগৈতিহাসিক কালে এমন হলেও এখন যুগ পাল্টে গেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছে আধুনিকতা। ভারী অস্ত্র, পারমাণবিক বোমাসহ নানান কিছু ব্যবহার হয় আধুনিক যুদ্ধে। আধুনিকতার ভীড়ে তরবারির যুদ্ধ হারিয়ে যায়নি একেবারেই, তবে এসেছে পরিবর্তন। এখন আর রণক্ষেত্রে নয় বরং সুসজ্জিত মঞ্চে ‘ফেন্সিং’ খেলা হিসেবে এ তরবারি যুদ্ধ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

‘ফেন্সিং’ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি খেলা হলেও বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। তবে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে ফেন্সার ফাতেমা মুজিবের স্বর্ণপদক অর্জনের মধ্য দিয়ে এ খেলা নতুন করে আলোচনায় আসে। বাংলাদেশের জাতীয় ফেন্সিং দলের কোচ আবু জাহিদ চৌধুরী জানান, শুরুতে এ খেলা কেবল সিনিয়রদের নিয়ে হলেও বিগত ৪-৫ বছর ধরে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের খেলাটির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারা। বর্তমানে দেশে ফেন্সিং ক্লাবের সংখ্যা ৪৫-৫০টি। ঢাকা সহ ১০টি জেলায় এ খেলার প্রশিক্ষণ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ, গার্লস আইডিয়াল, ঢাকা কমার্স কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, ভাসানটেক কলেজসহ আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

রাজকীয় খেলা ‘ফেন্সিং’

তিনি আরও বলেন, এ খেলাটি বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী হলেও বর্তমানে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যাদের মধ্যে কিশোর-কিশোরীদের আগ্রহই বেশি। তাদের মধ্যে ফয়েল ইভেন্টে হাসান, ফাইজুর, রায়হান, সেবার ইভেন্টে রনি, সাগর, ইপি ইভেন্টে মেহেদী, রবিউল এবং মেয়েদের মধ্যে জুঁই, সাদিয়া, জান্নত, এষা ছাড়াও আরও অনেকে বেশ ভালো করছে এবং আশা করা যায় এরা খুব শিগগির দেশের জন্য ভালো সাফল্য বয়ে আনবে।

আরও পড়ুন: মাত্র আড়াই বছরে সফল ক্যালিগ্রাফার জিহাদ

ইপি ইভেন্টের ফেন্সার মিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম তার কলেজ ভাসানটেক সরকারি কলেজের মাধ্যমে ফেন্সিং প্রশিক্ষণ শুরু করি। এই খেলাটি একেবারেই ভিন্নধর্মী এবং আমি খুবই উপভোগ করছি। আরেক ফেন্সার ফয়সাল হোসেন বলেন, আমি মিরপুর ফেন্সিং ক্লাবের একজন ফেন্সার। ছোটবেলা থেকেই আমার তলোয়ারবাজির প্রতি আগ্রহ ছিল কিন্তু তখন বাংলাদেশের কোথাও যে এর প্রশিক্ষণ হয় তা জানা ছিল না। পরবর্তীতে কলেজে এই খেলার প্রশিক্ষণের নোটিশ পেয়েই আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি, চলেই এলাম ফেন্সিং শিখতে। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল জনপ্রিয় হলেও আমার মনে হয় ফেন্সিং একটি রাজকীয় খেলা তাই এ খেলার প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ। আমার দুইটি পদক রয়েছে এবং আমি প্রতিনিয়তই প্রশিক্ষণ নিয়ে যাচ্ছি এ খেলায় নিজেকে আরও পারদর্শী করে তুলতে।

রাজকীয় খেলা ‘ফেন্সিং’

জুনিয়র ফেন্সার সাদিয়া আক্তার তিথী বলেন, আমি ২০২১ সালে প্রথম ফেন্সিং প্রশিক্ষণ শুরু করি। জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশীপে এ পর্যন্ত আমার ২ টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্য এবং ২ টি তাম্র পদক রয়েছে। আমি স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে অলিম্পিক গেমসে ফেন্সিংয়ে স্বর্ণ পদক অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার।

বাংলাদেশের ফেন্সাররা ২০১০ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তরবারির বাজিমাত দেখিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমবারের মত ২০১৯ সালের এস এ গেমসে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ফেন্সারদের অর্জন ১টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য ও ৭টি তাম্রপদক যা নিসন্দেহে একটি বড় অর্জন।

খেলাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে সরকার প্রদত্ত ফেন্সিংয়ের বাজেট খুবই সামান্য যা জুনিয়র টিমের জন্যই যথেষ্ট নয় এবং সিনিয়রদের ক্ষেত্রে তো হিমিশিম খাওয়ার উপক্রম। কাজেই ফেন্সিংয়ে পর্যাপ্ত স্পন্সর এবং সরকারের বাজেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করা অতি জরুরি বলে মনে করছেন ক্রীড়াবিদরা।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।