ভয়াবহ ৫ ভূমিকম্পে কেঁপেছিল বিশ্ব
সম্প্রতি তুরস্ক-সিরিয়ায় সীমান্ত অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এখন পর্যন্ত এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩০০ জনে। গোটা বিশ্ব যখান যুদ্ধ, শরণার্থী সংকট ও গভীর অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত তখন আরও একটি মানবিক বিপর্যয় দেখছে।
নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। দেশ দুটিতে আরও ভবন ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে এ ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে, যখন দেশটির প্রায় সব মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বলছে, তুরস্ক, সিরিয়া, সাইপ্রাস ও লেবানন, ইসরায়েল ও মিশরেও অনুভূত হয় ভূমিকম্প। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনসহ শত শত আফটারশক তুরস্কে আঘাত হানে। এই ধাক্কার ধারাবাহিকতা ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল।
তবে এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে কেঁপেছে বিশ্ব। প্রাণহানির সংখ্যা ছাড়িছে হাজার থেকে লাখে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত থেকে ধর্মীয় স্থাপনা। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে এক মুহূর্তে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের ভয়াবহ আরও ৫ ভূমিকম্প সম্পর্কে-
ইন্দোনেশিয়া ২০০৪
ভূমিকম্পের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে, এটাই সুনামি নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সুনামি বলা হয় ২০০৪ সালে, একটি ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প ও সুনামি। এই সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া; এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারায়। অনেক মৃতদেহই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। ইন্দোনেশিয়ার মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০ শতাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এই সুনামিতে।
জাপান ২০১১
জাপানের হোনশুর পূর্ব উপকূলের কাছে ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে অনেকের মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই ভূমিকম্পের ফলে ভয়াবহ সুনামিও আঘাত হানে দেশটির উপকূলে। কিছু পারমাণবিক চুল্লিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই ভূমিকম্পটি জাপানে রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।
হোনশু দ্বীপে আফটারশক অব্যাহত ছিল বেশ কয়েকদিন। আফটারশকগুলোর মধ্যে রয়েছে ৫০টিরও বেশি মাত্রার ৬ বা তার বেশি এবং তিনটি ছিল ৭ মাত্রার উপরে। প্রশান্ত মহাসাগর ও উত্তর আমেরিকার টেকটোনিক প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানা জাপান ট্রেঞ্চের কাছে থ্রাস্ট ফল্টিংয়ের কারণে ভূমিকম্পটি হয়েছিল। থ্রাস্ট ফল্টিং ঘটে যখন একটি টেকটোনিক প্লেট অন্যটির নিচে ডুবে যায়।
চীন ২০০৮
২০০৮ সালের ১২ মে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চীনের সিচুয়ান প্রদেশ। এই ভূমিকম্পে সিচুয়ান প্রদেশে ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়, আহত হয় তিন লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ধবংস হয় বেশিরভাগ বাড়িঘর। হাজার হাজার মানুষ এসময় গৃহহীন হয়েছিলেন।
ইরান ১৯৭৮
নব্বই শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যে একটি এটি। ১৯৭৮ সালে ইরানের ইয়াদ ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। মারা যান ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। ৮৫ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ শহরের। যে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ইরানের সময় লেগেছিল বেশ অনেকটা বছর।
নেপাল ২০১৫
নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে আট হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ১৯৩৪ সালের পর দেশটিতে ওটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা। নেপালের কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৯৮ শতাংশ ঘরবাড়িই ধ্বংস হয়ে যায়।
সূত্র: লাইভ সাইন্স/ আর্থকোয়াকট্র্যাক
কেএসকে/জেআইএম