ফার্মাসিস্টদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে শিক্ষকদের ভাবনা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

তানভীর আহমেদ রাসেল
১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম ফার্মেসি শিক্ষা চালু হয়। এর মাধ্যমে ওষুধ শিল্প তথা স্বাস্থ্যখাতের নতুন দিগন্তে পা রাখে বাংলাদেশ। দেশের মানুষের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা যোগান দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম ওষুধ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। এমন অর্জন ও অবদানের পেছনে সুনিপুণ কারিগর হিসেবে কাজ যাচ্ছে দেশের গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা। তবে নানান বৈষম্য ও অপ্রাপ্তি নিয়ে ফার্মাসিস্টদের দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। আজ ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট ডে। ফার্মাসিস্টদের এই বিশেষ দিনকে নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষকদের ভাবনায় ফার্মাসিস্টদের অবদান, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন-তানভীর আহমেদ রাসেল।

প্রদীপ দেবনাথ, সহকারী অধ্যাপক
বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি ঔষধ শিল্পের অগ্রণী ভূমিকা সর্বজন নিবেদিত এবং এর পেছনে ফার্মাসিস্টরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, ওষুধশিল্পকে রপ্তানিকারক শিল্প হিসেবে সমাদৃত করেছে যে ফার্মাসিস্টরা তারা অনেকক্ষেত্রেই পর্দার আড়ালে থেকে যান। ফার্মেসি একটি বহুমুখী পেশা, ফার্মাসিস্টদেরকে অবহেলা করে আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডাক্তার-নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্টরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ফার্মাসিস্টদেরকে সরকারিভাবে নিয়োগের পাশাপাশি হসপিটাল ও মডেল ফার্মেসিগুলোতে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। হসপিটাল ও কমিউনিটি ফার্মাসিস্টরা যেভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অবদান রাখতে পারবে অথবা স্বাস্থ্যসেবার যে পরিবর্তন আনবে, বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয়। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে ফার্মাসিস্টদেরকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানোর মধ্য দিয়ে তাদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হোক- এবারের বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে এটিই প্রত্যাশা।

মো: এনামূল হক, সহকারী অধ্যাপক
ব্রিটিশ শাসনামলে এদেশে ঔষধ কোম্পানি বিকশিত হয়। কিন্তু গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা সত্তর দশক হতে স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখতে শুরু করে। সেসময় কিছুটা প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও ১৯৮২ সালের ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিনেন্স এর ফলে ঔষধ কোম্পানিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়। সেসময় থেকে অদ্যাবধি তারা ঔষধের গবেষণা, ঔষধ তৈরি, ঔষধের গুণগতমান নির্ণয় ও বাজারজাত করতে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে আসছে। অধিকন্তু, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন ব্যাংকসহ বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ফার্মাসিস্টরা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।

ঔষধ শিল্পে ফার্মাসিস্টদের কাজের সুযোগ থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার অন্যান্য খাত যথা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে তাদের ক্ষেত্র আজও তৈরি হয়নি। উন্নত বিশ্বে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও এদেশে তাদের গুরুত্বের কথা ভাবা হয়নি। তাই নিরাপদ ঔষধ বিতরনে ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য উন্নত বিশ্বে মত সর্বস্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের পদায়নের মাধ্যমে আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা করছি।

সাদিয়া জাহান, প্রভাষক
বিশ্বজুড়ে মানবজাতির সুস্থ থাকার নেপথ্যে ফার্মাসিস্টদের ইতিবাচক ভূমিকার প্রচার করা এবং পেশাজীবীদের মধ্যে সংহতি আরও জোরদার করার জন্য ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস পালিত হয়ে আসছে। ফার্মাসিস্টরা তাদের মেধা ও দায়িত্বশীল ভূমিকার মাধ্যমে ঔষধ উৎপাদন ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানের মাধ্যমেই নিরলসভাবে স্বাস্থ্যখাতে সেবা দিয়ে আসছে যা অদ্বিতীয় ও অপূরণীয়। বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকলেও দেশের স্বাস্থ্যখাতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন দেশের হাজারো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা।

২০২২ সালে ফার্মাসিস্ট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্বাস্থ্যকর বিশ্বের জন্য ফার্মাসিস্টদের ঐক্যবদ্ধ’। এই স্লোগান যথাযথ স্বার্থক করতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো দেশের ফার্মাসিস্টদের যথাযথ কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। হাসপাতালগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দেওয়া হলে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও নার্সের একটি সমন্বিত ব্যবস্থায় দেশের মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে ডাক্তারের কাজের চাপ কমার পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উন্নত ও নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। সম্মানজনক কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হলে দেশের মেধা পাচার অনেকাংশে কমে যাবে যা সুখী, সমৃদ্ধ ও মেধাভিত্তিক জাতি বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিদ্যুৎ কুমার সরকার, প্রভাষক
বাংলাদেশ এখন ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে সবার আগে যে কয়েকটি শিল্পের নাম আসে তার মধ্যে অন্যতম হলো ওষুধ শিল্প। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ওষুধ শিল্পের অবদান উল্লেখযোগ্য। দেশে বর্তমানে ৩০০টিরও বেশি ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান আছে। যারা দেশের চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারেও ওষুধ রপ্তানি করে বৈদেশিক বাণিজ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর ক্রমবর্ধমান এ শিল্পের মূল চালিকা কিন্তু ফার্মাসিস্টদের হাতে।

বিশ্বের প্রতিটি দেশেই প্রি প্রোডাকশন থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট ফর্মূলেশন, উৎপাদন, ওষুধের মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা, গবেষণা পর্যন্ত গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কঠোর মাননিয়ন্ত্রণের পরেই প্রতিটি ওষুধ রোগ নিরাময়ের জন্য পৌঁছায় মানুষের হাতে। অসুস্থ মানুষ শরণাপন্ন হয় চিকিৎসকের, রোগীর সমস্যা জেনে রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ লেখেন চিকিৎসক। অন্যদিকে গুণগতমান ঠিক রেখে কঠোর পরিশ্রম ও মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই ওষুধ তৈরি করছেন একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট।

ফার্মাসিস্টদের এই কঠোর পরিশ্রম মানব সেবারই অংশ মাত্র। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ২৫ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বে পালন করা হয় ‘ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট ডে’। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে প্রত্যাশা, শুধু ওষুধ উৎপাদনে নয়, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফার্মাসিস্টদের স্বাস্থ্যখাতের সব স্তরেই কাজে লাগানো হোক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।