ডিভোর্স পেতে স্বামী-স্ত্রীর তুমুল লড়াই!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৪ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য কিংবা সম্পর্কে একঘেয়েমি বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। তবে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি এখন খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। আদালতে আবেদন করলেই ঝামেলা মিটে যায়। স্বামী বা স্ত্রী যেই আবেদন করুক, আদালত তাদের নিয়ম অনুযায়ী পদ্ধতি মেনেই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত দেন।

এরপর দুজনই মুক্ত। তবে মধ্যযুগে এত সহজ ছিল না বিবাহবিচ্ছেদ। এজন্য স্বামী-স্ত্রীকে তুমুল লড়াই করতে হতো। বিবাহবিচ্ছেদ এমন একটি বিষয়, যা যুগে যুগে নাটক এবং কৌতুক লেখকদের জন্য অফুরন্ত উপাদান সরবরাহ করেছে। ইউরিপিডস থেকে শেক্সপিয়ারের অনেক লেখায় উঠে এসেছে বিবাহবিচ্ছেদের কথা।

ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক কেনেথ হজেস একটি মধ্যযুগীয় জার্মান পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। সেখানেই পাওয়া যায় ‘যুদ্ধের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ’ এর নিয়ম। হাতে এই বই লেখা হয়েছিল ১৪৬৭ সালে। যুদ্ধের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ হতো সে সময়। স্বামী-স্ত্রী যখন আদালতে আবেদন করতেন বিবাদবিচ্ছেদের জন্য। তখন তাদের এক জীবন-মরণ যুদ্ধে লড়াই করতে হতো। এই যুদ্ধে যে জিতবে তার কথাই মেনে নেওয়া হবে।

স্বামীকে কোমর পর্যন্ত বা ৩ ফুট একটি গর্তে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো প্রথমে। হাতে থাকত লাঠি, বল্লমসহ বিভিন্ন অস্ত্র। তবে এগুলো থাকত ভোঁতা। অন্যদিকে স্ত্রী থাকতেন উপরে। হাজার হাজার মানুষ এই লড়াই দেখতে হাজির হতেন আদালত প্রাঙ্গণে। এ সময় তারা একধরনের বিশেষ বডিস্যুট পরতেন।

এই যুদ্ধে বেশিরভাগ সময়ই স্ত্রীরা জিতে যেতেন। কারণ তারা থাকতেন স্বাধীন অবস্থায়। যেহেতু স্বামীদের গর্তে কোমর পর্যন্ত ঢাকা থাকত; সেকারণে খুব বেশি লড়াই করতে পারতেন না তারা। স্ত্রীরা তাদের মেরে অজ্ঞান করে ফেলতেন। আবার মাঝে মাঝে প্রাণ রক্ষার বিনিময়ে দোষ স্বীকার করতেও বাধ্য করা হতো স্বামীদের।

এই লড়াইয়ের নিয়ম ছিল, স্ত্রীরা চাইলে স্বামীদের গর্ত থেকে টেনে বের করে আনতে পারবেন। আবার স্বামীরা স্ত্রীদের গর্তের ভেতর টেনে নিয়ে যেতে পারবেন। মূল কথা হলো লড়াইয়ে জেতা। কারণ এই লড়াই শুধু বিবাহবিচ্ছেদই নিশ্চিত করবে না, প্রাণটাও রক্ষা করবে।

যুদ্ধে স্বামী হেরে গেলে তাকে শহরের মাঝখানে নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। স্ত্রী হেরে গেলে তাকে সবার সামনে জীবন্ত কবর দেওয়া হবে। এটাই ছিল শেষ পরিণতি। লড়াইয়ের পর তো বটেই, লড়াই করার সময়ও অনেকে মারা যেতেন। বেশিরভাগ সময় নারীরাই মারা যেতেন। কারণ একবার স্ত্রীকে গর্তে টেনে নিতে পারলে আর তার বাঁচার উপায় ছিল না। তবে পুরুষদের তালিকাও ছোট ছিল না।

যুদ্ধ দ্বারা বিচার ছিল জার্মানিক আইনের অংশ। যা দুটি পক্ষের মধ্যে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সাহায্য করত। সে সময় সাক্ষ্য প্রমাণের দরকার হতো না। লড়াইয়ে যে জিতবে, তার অভিযোগই সত্য বলে ধরে নেওয়া হবে। অন্যজন শাস্তি ভোগ করবে। এটি যে শুধু বিবাহবিচ্ছেদের জন্যই হতো তা নয়। লড়াই হতো অন্যান্য বিচারের ক্ষেত্রেও।

সূত্র: অ্যান্সাইন্ট অরিজিন

কেএসকে/এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।