৭৮ বছরে ‘আয়রন লেডি’র ১৯ বিশ্বরেকর্ড
বয়স কোনো কাজেই বাধা হতে পারেনা। এটি একটি সংখ্যা মাত্র। আপনি যে কোনো বয়সে যে কোনো কাজ শুরু করতে পারেন। শুধু পরিশ্রমই আপনাকে সফলতা এনে দিতে পারবে। তার আবারও প্রমাণ দিলেন ৭৮ বছর বয়সি নোরা ল্যাংডন। একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাওয়ারলিফটার। এরই মধ্যে ১৯টি বিশ্বরেকর্ড আছে তার ঝুলিতে।
১৫৯ কিলোগ্রামের ওজন কাঁধে নিয়ে কাউকে স্কোয়াটিং করতে দেখলে যে কারো চোখ কপালে উঠে যায়। সেখানে এটি নোরার প্রতিদিনের অনুশীলনের অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান প্রদেশের সাউথফিল্ডের বাসিন্দা এই নারী অ্যাথলিট হয়ে উঠেছেন তরুণদের অনুপ্রেরণা।
নোরার অ্যাথলিট হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু ৬৫ বছর বয়সে। যখন অন্যরা অবসর কাটান। তখন ওয়েটলিফটিং বা ভারোত্তোলনের জগতে তার আত্মপ্রকাশ। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা বা অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না তার। নোরা পেশায় একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। দীর্ঘ ৩৫ বছর এই কাজ করেছেন এই জগতে। বেশ দৌড়াঝাঁপ করতে হয়েছে কাজের পুরো সময়টা।
ষাট পেরনোর পর এই দীর্ঘ পরিশ্রমের ক্লান্তি ভর করে শরীরে। তাই তো বিশ্রামের জন্য সরে আসেন কাজ থেকে। তবে তার বছর কয়েক পর সেই ক্লান্তিকেই তিনি হার মানালেন অন্যভাবে। এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মিশিগানের অন্যতম অ্যাথলেটিক্স জিম ‘রয়্যাল ওক’-এর প্রশিক্ষক আর্ট লিটলের সঙ্গে। সুস্থ থাকার জন্য তিনিই নোরা শরীরচর্চার পরামর্শ দেন।
তবে নোরা তা খুব একটা আমলে নেননি। বেশ আয়েশে শুয়ে বসে অবসার কাটাচ্ছিলেন। মাস খানেক পর নোরা জিমে শুরু করেন। ট্রেড মিলে দৌড়ানো, কার্ডিও শুরুতে অন্যদের মতো তাকেও এসব শিখতে হচ্ছিল। তবে নোরার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওয়েটলিফটিং। প্রশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে নিজের রুটিন বদলে ফেলেন তিনি।
প্রথমে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও, নোরার একাগ্রতা ও পরিশ্রম রীতিমতো অবাক করে দেয় প্রশিক্ষক আর্ট লিটলকে।
২ বছরের মধ্যেই অভাবনীয় উন্নতি করেন নোরা। দেড়শো পাউন্ড ওজন তোলাও যেন অতিসাধারণ হয়ে উঠেছিল তার কাছে।
গত এক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপেন পাওয়ারলিফটিংয়ে রীতিমতো রাজত্ব করে আসছেন নোরা। এরই মধ্যে তার ঝুলিতে আছে ২৫টির বেশি পদক, ১৯টি বিশ্বরেকর্ড। যার মধ্যে আছে ৪১৩ পাউন্ডের স্কোয়াট, ৩৮১.৪ পাউন্ডের ডেডলিফট এবং ২০৪ পাউন্ডের বেঞ্চ প্রেস।
ওপেন ক্যাটাগরিতে এখনও পর্যন্ত ২৫টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন নোরা। যার মধ্যে পদক জিতেছেন ২৩টিতেই। এটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ড। এসব কৃতিত্বের জন্যই ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি তার এই কৃতিত্বকে নিয়েই তৈরি হয়েছে এক ব্যতিক্রমী তথ্যচিত্র। তবে নোরার একটি আপসোস আছে। সঠিক বয়সে এই প্রশিক্ষণ শুরু করলে হয়তো অলিম্পিক কিংবা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতেও অংশ নিতে পারতেন তিনি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
কেএসকে/এমএস