প্রেমের হাটে জীবনসঙ্গী খোঁজেন যে নারীরা
বিশ্বের ১৯৫টি দেশের রয়েছে কয়েকশ জাতির মানুষ। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস সবই একে অন্যের থেকে আলাদা। এখনো এমন অনেক জাতি আছে যারা সভ্যতার আলোতে আসতে পারেনি। বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। আবার সে সম্পর্কে জানলেও নিজেদের সংস্কৃতি থেকেও সরে আসেনি।
তেমনই এক জাতি ক্রেয়াং। কম্বোডিয়ার রতনকিরি অঞ্চলের অনেক ভেতরে এদের বাস। কয়েকশ বছর ধরে এখানেই আছে তারা। আধুনিকতার ছোঁয়া সেভাবে লাগেনি তাদের গায়ে। আগের মতোই তারা জঙ্গলের কাঠ, পশু শিকার ও মাঠে চাষাবাদ করেই দিন কাটায়।
কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ নেই। তেমনি মদ্যপান কিংবা ধূমপান করার ক্ষেত্রেও ভেদাভেদ রাখেন না তারা। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই উপজাতির নারীরা প্রেমিক খোঁজেন হাটে গিয়ে। এখানে প্রেম-যৌনতায় নেই কোনো বাধা।
বিশ্বের যে প্রান্তেই যান না কেন দেখা যাবে, সন্তানের প্রেমের ব্যাপারে বাবা-মা খুবই সচেতন। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখেন সন্তানদের। আর ক্রেয়াং উপজাতির বাবা-মায়েরা সন্তানদের প্রেমে কোনো বাধাই দেন না। বরং তাদের লিভ-টুগেদারের অনুমতিও দেন।
এখানেই শেষ নয়, পছন্দের সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটাতে আলাদা ঘরও বানিয়ে দেন। কম্বোডিয়ার ক্রেয়াং প্রজাতি তাদের সমাজকে তৈরি করেছে এভাবেই। ক্রেয়াংদের বাস কম্বোডিয়ার উত্তর-পূর্বের একটি দ্বীপ অঞ্চলে। এই গ্রাম পরিচিত ‘প্রেমের গ্রাম’ নামেই।
প্রযুক্তি ও আধুনিকতা থেকে বহু দূরে থাকা এই গ্রামের বাইরের দুনিয়ায় কী চলছে তা নিয়ে এতটুকু মাথাব্যথা নেই। এই গ্রামে নেই বিদ্যুৎ। নেই কোনো প্রযুক্তির ব্যবহার। এখানে কেউ জানে না কোথায় কি হচ্ছে। কে কি করছে। তারা তাদের নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।
ক্রেয়াং উপজাতিরা প্রেম বা লিভ টুগেদারের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়েও বেশি অগ্রগামী। সামাজিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রেম করা এবং সঙ্গীর সঙ্গে লিভ ইন করার অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে এ গ্রামে। কেননা এটাই গ্রামের আইন।
মেয়েরা ঋতুমতী হলেই মা-বাবা তাকে সঙ্গী বাছাইয়ের স্বাধীনতা দেন। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই সঙ্গী খোঁজার ছাড়পত্র পায় ছেলেরাও। প্রয়োজনে তারা কোনো কিছু না ভেবেই করতে পারে লিভ ইন। সেই ব্যবস্থাও করে দেন মা-বাবাই। যুগলের সময় কাটানোর জন্য বাবা-মাই তৈরি করে দেন ‘লাভ হাট’।
ক্রেয়াংদের এই গ্রামটি জলাশয়ে ঘেরা। সেই জলাশয়ের উপরেই তৈরি করা হয় কুঁড়ে ঘর‘লাভ হাট’। যাতে তাদের সন্তান সঙ্গীর সঙ্গে নিশ্চিন্তে সময় কাটাতে পারেন। বুঝে নিতে পারেন একে অপরকে।
অনেক বছর ধরে তাই গ্রামে এই নিয়ম চলছে। যাতে প্রেমিক-প্রেমিকাকে কেউ বিরক্ত করতে না পারে বা অস্বস্তিতে না পড়ে, সেদিকে নজর রাখে তাদের বাবা-মাই। বিয়ে এই গ্রামে প্রচলিত নয়। প্রেমিক-প্রেমিকা কয়েক মাস একে অপরকে বুঝে নেয়ার পরই শুরু করেন লিভ ইন। সন্তানের জন্মও হয় লিভ ইন সম্পর্ক থেকেই।
এজন্য এই গ্রামে কিশোরী মায়ের সংখ্যা অনেক বেশি। সেখানে গেলেই দেখা মেলে কিশোরী মেয়েদের কোলে ছোট বাচ্চা আছে, সঙ্গে হয়তো আরও একটা। এছাড়াও নানান যৌন রোগেও আক্রান্ত হন কিশোর-কিশোরীরা। আধুনিক চিকিৎসা না থাকায় সামান্য অসুখেই মারা যান এখানকার মানুষ।
এখনো তারা তাদের আদি রীতি অনুযায়ী জঙ্গলের ঘাস-পাতা দিয়েই চিকিৎসা করেন। ২০১১ সালে মেরি ক্লেয়ারের একটি দল গিয়েছিল কম্বোডিয়ার ক্রেয়াং উপজাতিদের গ্রামে। সেখানেই গিয়ে তারা আবিষ্কার করেন এই কিশোর-কিশোরীদের অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতি। ক্রেয়াং উপজাতি তাদের মেয়েকে অন্য গ্রামে বিয়ে দেন না। নিজের গ্রামেই অনেক সময় একই সঙ্গে থাকেন বাবা-মা ও তার মেয়ের সংসার।
বর্তমানে অনেক সংস্থা এগিয়ে আসছে ক্রেয়াং উপজাতিকে সভ্যতার স্রোতে ফেরাতে। তারা সেখানকার মানুষকে জানাচ্ছেন শিক্ষা, চিকিৎসা ও যৌনতা সম্পর্কে। তবে শুরুতে শত বছরের ঐতিহ্য ছাড়তে না চাইলেও এখন তারা এসবে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
শুধু ক্রেয়াং উপজাতিই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অনেক উপজাতির মধ্যেও রয়েছে এমন উদ্ভট সব রীতিনীতি। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারের ওদাবি উপজাতির পুরুষরা একে অপরের স্ত্রী চুরি করে। এটিই তাদের সংস্কৃতির অংশ। অন্যের বউ চুরি করে নিয়ে নিজেরা আবার নতুন সংসার শুরু করে। এই উপজাতির পুরুষদের শৈশবেই বিয়ে দেওয়া হয়। তাদের আরেকটি রীতি আছে যেখানে তাদের বার্ষিক গেরেওল উৎসব পালন করা হয়। সেই উৎসবে পুরুষরা মেকআপ এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে হাজির হয়। মূল উদ্দেশ্য নারীদের আকৃষ্ট করা।
সূত্র: মিডিয়াম, ডেইলি মেইল
কেএসকে/এমএস