রাক্ষুসে মাছের চামড়ায় তৈরি দামি ব্যাগ-জুতা

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৮ পিএম, ১৮ জুন ২০২২

লেদার বা চামড়ার ব্যাগ জুতা ফ্যাশনে বেশ জনপ্রিয়। দামে অনেক বেশি হলেও কমবেশি চান সংগ্রহে একটি চামড়ার ব্যাগ বা জুতা রাখতে। চামড়ার পণ্য তৈরিতে শুধু গরু বা মহিষের চামড়া নয়, ব্যবহার হয় সাপ ও কুমিরের চামড়াও। যা অনেক বেশি দামে কিনতে হয় লেদারের পণ্য প্রেমীদের।

তবে এসব পশু বা প্রাণির পাশাপাশি মাছের চামড়ারও ব্যবহার করা হয় এসব পণ্য তৈরিতে। জানেন কি? অন্যান্য পশুর চামড়ার থেকে অনেকবেশি টেকসই মাছের চামড়া। আবার এগুলোর থেকে বেশ চড়া দামেই বিক্রি হয় মাছের চামড়ার তৈরি পণ্য।

jagonews24

মাছের চামড়া হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় রাক্ষুসে মাছ হিসেবে পরিচিত লায়ন ফিশ। এই মাছ সমুদ্রের অন্যান্য জলজ প্রাণি এবং মাছ খেয়ে ফেলে। যা সমুদ্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফ্লোরিডার একজন ডুবুরি আরভ ছাদভা। এই উপকূলে দীর্ঘদিন ধরেই পানির নিচে বিচরণ করে চলেছেন তিনি। সেখানেই দেখেছেন, ধীরে ধীরে ভয়ংকর লায়নফিশের দৌরাত্মে ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্র।

কোরাল ভরা ফ্লোরিডা সমুদ্রতটে লায়নফিশের কোনো খাদক সেভাবে নেই বললেই চলে। ফলে লাগামহীনভাবে কোরালসহ অন্যান্য জলজ জীবের ঠাঁই কাঁটায় মোড়া এই মাছের পেটে। প্রায় ৫ সপ্তাহের মধ্যেই কোরাল রিফের প্রায় ৭৯ শতাংশ জলজ প্রাণী উদরস্থ করে ফেলেছিল রাক্ষুসে মাছের ঝাঁক। ছাদভা বুঝতে পারেন এভাবে চললে বেশিদিন লাগবে না এই অঞ্চলে সামুদ্রিক প্রাণির অস্তিত্ব বিলীন হতে।

jagonews24

শুধু ফ্লোরিডা নয়, ক্যারাবিয়ান থেকে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে এই রাক্ষুসে মাছ। যে কারণে ঐ সব অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি। ছাদভার দাবি, একটি লায়নফিশের প্রাণের বিনিময়ে বাঁচবে প্রায় ৭০ হাজার সামুদ্রিক মাছ।

ছাদভা তার স্কুবা-ডাইভার বন্ধুদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ইনভার্সা'। এর চালিকাশক্তি মূলত ছাদভা নিজে এবং তার ছোটবেলার বন্ধু রোল্যান্ড সালাতিনো।

jagonews24

মাছের চামড়াকে প্রথমে বিভিন্ন ড্রাইয়িং এজেন্টের সাহায্যে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। তারপর তৈরি হয় নিত্যনতুন পণ্য। দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য নানা প্রোডাক্ট থেকে হালফিলের ফ্যাশন কিছুই বাদ নেই। মানিব্যাগ, হ্যান্ডব্যাগ, বেল্ট, জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি হচ্ছে মাছের চামড়া দিয়ে। নামিদামি ব্র্যান্ডও তৈরি হয়েছে এসব পণ্যের।

তবে ‘ইনভার্সা’ নিজে সরাসরি এই নিধনযজ্ঞে সামিল হয় না। সেই কাজটি করেন স্থানীয় মৎস শিকারীরা। তবে লায়নফিশ শিকারে সময়, শ্রম দুটোই ব্যয় হয় অনেক বেশি। কারণ পানির নিচে বিষাক্ত কাঁটা বাঁচিয়ে এই ভয়ংকর মাছকে বাগে আনতে গেলে লাগে যথেষ্ট বিচক্ষণতা এবং অভিজ্ঞতা।

jagonews24

কোরাল রিফকে বাঁচানোর এই লড়াইতে মৎস শিকারীদের খানিক আর্থিক ক্ষতির মুখই দেখতে হচ্ছে। তারা লায়নফিশ বাদে অন্যান্য মাছের দিকে তেমন নজর দিতেও পারছেন না বলেই এমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। লায়ন ফিশ শিকার যেমন বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করতে তেমনি ফ্যাশন জগতেও তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।