বায়ুদূষণ রোধের ৭ উপায়

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৭ পিএম, ১৫ জুন ২০২২

আজ ১৫ জন বিশ্ব বায়ু দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন শ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু গ্রহণ করছে। বায়ু দূষণের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। যাদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের।

আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’-এর ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৭৬.৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০-এর কম।

বায়ুদূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরে রয়েছে চাদ, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, ভারত, ওমান, কিরগিজস্তান, বাহরাইন, ইরাক ও নেপালের নাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর নয়াদিল্লি (ভারত)। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরের সমীক্ষা অনুযায়ী বায়ুদূষণের ফলে কমছে মানুষের আয়ু। হাঁপানি, ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখসহ অনেক রোগের কারণ বায়ুদূষণ। এ রোগ বৃদ্ধির জন্যও বায়ুদূষণ দায়ী। বায়ুদূষণের দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা মোট বিশ্ব উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ।

বায়ুদূষণ তাদেরই বেশি প্রভাবিত করে, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু সরাসরি পিএম ২.৫-জনিত বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও বায়ুতে থাকা দূষণের মাত্রা বাড়ার ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতি ঘন্টায় ৮০০ জন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে,পারিপার্শ্বিক বায়ুতে কিছু কিছু বস্তু যথেষ্ট পরিমাণে মিশ্রিত হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য মানুষ ও তার পরিবেশ ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে বায়ুদূষণ বলে।

পরিবেশবিদ পার্কিন্স তার রচিত ‘এয়ার পলিউশন’ বইতে বলেছেন যেন ঘরের বাইরের আবহমণ্ডলে এক বা একাধিক সংক্রামক বস্তু যেমন- বিষাক্ত ধোঁয়া, ধূলিকনা, গ্যাস, কুয়াশা, কাঁকর, ধোঁয়াশা অথবা বাস্পের যে পরিমান উপস্থিতি ও যতক্ষন স্থায়ী হলে মানুষ, জীবজন্তু অথবা উদ্ভিদ জগতের পক্ষে ক্ষতিকারক, তাকেই বায়ুদূষক বলা হয়।

উইন্ডইউরোপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে অঞ্চলগুলো উপকূলীয় স্থানে আছে সেই স্থানের বায়ুশক্তি এখন সারা বিশ্বের সস্তা শক্তি। যদিও ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় টারবাইন ব্যবহার করে বায়ু শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করা হয়। বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য সর্বপ্রথম ২০০৭ সালের ১৫ জুন বিশ্ব বায়ু দিবস পালন করা হয়েছিল। এর ঠিক দুই বছর পর অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে এই দিবস পালন করা হয়ে আসছে। এই দিবসের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয় , অপ্রচলিত শক্তিকে ভবিষ্যত করে গড়ে তোলার জন্য। কারণ প্রচলিত শক্তির ভাণ্ডার একদিন না একদিন শেষ হবে , উপরন্তু দিনের পর দিন বোঝা বাড়ছে পরিবেশ দূষণের।

রাস্তা নির্মাণের কাজ, করকারখানার ধোঁয়া, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ধূমপান, যেখানে সেখানে কাগজ, নোংড়া পুড়িয়ে ফেলার ফলে বায়ু দূষণ হচ্ছে। বায়ুদূষণ রোধে যা করণীয়-

>> শিল্পাঞ্চলের কারখানা থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, ধাতব কনা, ধোঁয়া প্রভৃতি প্রচুর পরিমানে বাতাসে মিশ্রিত হয়ে বাতাসকে দূষিত করে।

>> বিভিন্ন যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানীর (পেট্রোল ও ডিজেল) দহনের ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকার গ্যাস নির্গত হয়। এগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান বায়ুদূষক কার্বন মনোক্সাইডের প্রায় ৭০ শতাংশ এই যানবাহন থেকে নির্গত হয়। এছাড়া যানবাহনের ধোয়ায় প্রচুর নাইট্রোজেনের অক্সাইড থাকে যা বায়ুকে দূষিত করে তোলে। যানবাহনের আধিক্যের জন্য শহরাঞ্চলের বাতাস বেশি দূষিত হয়।

>> কয়লা নির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নাইট্রাস অক্সাইড, সালফারের অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড প্রভৃতি গ্যাস ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ছাই বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়। পৃথিবীর মোট সালফার দূষণের প্রায় ৩০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দহনের ফলে বাতাসে মিশ্রিত হয়।

>> মৃত জীবদেহের পচনের ফলে অনেক ধরণের দূর্গন্ধ যুক্ত গ্যাস যেমন মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়। এজন্য আশেপাশে জীবজন্তু মারা গেলে তা মাটিচাপা দিয়ে রাখুন।

> > শুষ্ক ঋতুতে অনেকেই আবর্জনা সংগ্রহ করে তা পুড়িয়ে নষ্ট করেন। বিশেষ করে বনের শুকনো পাতা এভাবে নষ্ট করা হয়। এ থেকে তৈরি ধোঁয়া পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

>> এছাড়া ধূমপান বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। যতদূর সম্ভব ধূমপান এড়িয়ে চলুন। এতে যেমন ধূমপায়ী নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি আশেপাশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমানভাবে।

>> রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে।

কেএসকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।