আর্কাইভের কাজ কী?

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১২ পিএম, ০৯ জুন ২০২২

পলাশীর যুদ্ধ থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। একই সঙ্গে ব্রিটিশদের বাংলা শাসন, মীর জাফরের জন্মভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, নীলচাষের নামে বাংলার মানুষ ও মাটিকে ধবংস করার ইতিহাস সবই সংরক্ষিত আছে আর্কাইভে।

আর্কাইভের একেক পাতায় বাংলার একেক ইতিহাস। যা বাঙালিকে চিরকাল স্মরণ করাবে দুঃসহ অতীত। এছাড়াও দুর্লভ সব ছবি সংরক্ষিত আছে জাতীয় আর্কাইভসে। বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে এমন নিজস্ব আর্কাইভস। সেই পুরোনো নথি ও ইতিহাস সংরক্ষিত রাখার অনুপ্রেরণা যোগাতে প্রতিবছর পালিত হচ্ছে আর্কাইভস দিবস।

আজ ৯ জুন বিশ্ব আর্কাইভ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস পালিত হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভ (আইসিএ) এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘আর্কাইভ আর ইউ’ বাংলায় ‘তুমিই আর্কাইভ’।

মূলত আর্কাইভস হচ্ছে একটি সংরক্ষণাগার। এখানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি রেকর্ড এবং অন্যান্য মূল্যবান ঐতিহাসিক নথিপত্র সুসংবদ্ধভাবে সুরক্ষিত রাখা হয়। সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত সূত্র থেকেও ‘আর্কাইভসামগ্রী’ সংগৃহীত হয়ে থাকে। এসব সামগ্রীর বয়স সরকারি ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ বছর এবং বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৩০ বছর হতে হয়।

তবে পুরোনো হলেই যে সবকিছু আর্কাইভসামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয় তা কিন্তু নয়। এ বিষয়ে ১৯৮৩ সালে ‘ন্যাশনাল আর্কাইভস অর্ডিন্যান্স’ নামের একটি অধ্যাদেশ ছিল। তাকে সময়োপযোগী করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, আর্কাইভসামগ্রীর ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক তাৎপর্য থাকতে হবে। এর মধ্যে নানা রকমের নথি, পাণ্ডুলিপি, পত্রিকা, চিঠি, নিবন্ধন, বই, মানচিত্র, তালিকা, নকশা, আলোকচিত্র, দলিল (হাতে লেখা বা আঁকা বা অন্য কোনোভাবে উপস্থাপিত), সরকারি দপ্তরের কাজের অংশ হিসেবে প্রস্তুত করা কাগজপত্র, রাষ্ট্রীয় চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, কমিশন রিপোর্ট, সিনেমাটোগ্রাফ, ফিল্ম, রেকর্ডিং, টেপ, ডিস্ক থেকে বিশিষ্টজনের হাতের লেখা পর্যন্ত বিপুল বিচিত্র জিনিসপত্র রয়েছে এই আর্কাইভসামগ্রীর তালিকায়। এ কারণেই আর্কাইভস সারা বিশ্বেই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্য উৎস হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে।

ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আর্কাইভস (আইসিএ) এর উদ্যোগে ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছরের এইদিনে পালিত হয় বিশ্ব আর্কাইভ দিবস। সুশাসন, তথ্যভাণ্ডার ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে ১৯৭২ সাল থেকে জাতীয় আর্কাইভস কাজ করে আসছে। জাতীয় আরকাইভস আজ বাংলাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় আর্কাইভসের সংগ্রহ ক্রমেই সমৃদ্ধ আর বিপুল হয়ে উঠছে। এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত নথিপত্রের পরিমাণ পাঁচ কোটি পাতা ছাড়িয়ে গেছে। এসব নথিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ বৈশিষ্ট্য অনুসারে পদ্ধতিগতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এই বিশাল খড়ের গাদা থেকে দরকারি সুচটি সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা করে ক্যাটালগ তৈরি করা হয়েছে। অবশ্য ক্যাটালগের সংখ্যাও ৬৫টি। যার যে তথ্য উপাত্ত দরকার, তিনি এই নির্দিষ্ট ক্যাটালগ থেকে তা খুঁজে নিতে পারবেন। ক্যাটালগের নির্দেশনা থেকে মূল পাতাটির সন্ধান পাওয়া যাবে।

তবে এখানে চলচ্চিত্র বা সংগীতের পুরোনো নিদর্শন পাওয়া যাবে না। সাধারণভাবে অনেকের ধারণা, জাতীয় আর্কাইভস আর চলচ্চিত্র আর্কাইভ একই প্রতিষ্ঠান। একেবারেই না, দুটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় আর্কাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগার অধিদপ্তর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৯৭৮ সালের ১৭ মে ‘ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ’ যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৪ সালে এর নাম রাখা হয় ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের নভেম্বরে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় আরকাইভস ভবন নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। জাতীয় আরকাইভস ভবন নির্মাণের প্রথম পর্যায় ২০০৪ সালে এবং ২য় পর্যায় ২০১২ সালে শেষ হয়। বর্তমানে জাতীয় আরকাইভসের কার্যক্রম ৫তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন এবং ৭তলা বিশিষ্ট স্ট্যাক ভবনে সম্পাদন হচ্ছে যা আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭-এ অবস্থিত।

জাতীয় আর্কাইভসের নথিপত্রের সাত কোটি পাতার মহাসমুদ্রের মধ্যে রয়েছে বহু দুর্লভ মণিরত্ন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আছে অষ্টাদশ শতকের তালপাতায় লেখা পাণ্ডুলিপি। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রের নকশা, ১৭৮০ সালে মেজর রেনালের আঁকা ঢাকার আদি মানচিত্র, ১৭৮৪ সালে টিপু সুলতানের সঙ্গে ইংরেজদের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র, ১৮৫৭ সালে পাবনায় নীল বিদ্রোহের নথি এবং ১৮৭৮ সালের দুর্ভিক্ষের নথি।

এছাড়াও আছে মাস্টারদা সূর্য সেনের ফাঁসির রায় ও ফাঁসির মঞ্চের ছবি, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী, পুরানা পল্টনে জাতীয় ঈদগাহের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেটের পাঠানো ৫০ বিঘা জমির দলিলসহ ১৮৩২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব গেজেট, জেলা, বিভাগ, পরগনার মানচিত্র, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নথিসহ বহু নিদর্শন। তবে এখন কাগজে থাকলেও ভবিষ্যতে সব আর্কাইভ হবে ডিজিটাল।

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।