যেসব দেশে সাপের খামার জনপ্রিয়

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ০৯ জুন ২০২২

সরীসৃপ প্রাণীর মধ্যে সাপ অন্যতম। সাপ হাত-পাবিহীন দীর্ঘ শরীরের মাংসাশী এক প্রকার সরীসৃপ। বিশ্বে মোট ২ হাজার ৯০০টিরও বেশি প্রজাতির সাপ আছে। সুদূর উত্তর গোলার্ধের স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এদের বসবাসের বিস্তৃতি।

অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই সাপের উপস্থিতি দেখা যায়, সমুদ্রের গভীর তলদেশ থেকে পর্বতের সুউচ্চ শানুদেশে প্রায় ষোলো হাজার ফুট ওপরে হিমালয় পর্বতমালাতেও রয়েছে সাপের বসবাস। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, এমন কিছু দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জ আছে যেখানে সাপের দেখা পাওয়া যায় না। যেমন আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডে সাপের কোনো চিহ্ন নেই।

jagonews24

সাপ নিয়ে যেমন ভীতি আছে, তেমনি অনেক দেশে সাপের কদরও রয়েছে। অনেকে অন্যান্য পশুপাখির মতো বাড়িতেও সাপ পোষেন। যদিও বেশিরভাগ সময় সেসব সাপের বিষ থাকে না। বিশ্বে সাপের দাঁত, চামড়া, বিষের অনেক চাহিদা থাকায় অনেক দেশে সাপের খামারও গড়ে উঠেছে।

আমাদের দেশে কিছু সাপের খামার গড়ে উঠলেও সরকারের বিধিনিষেধে সেগুলো খুব বেশি এগোতে পারছে না।তবে বিশ্বের অনেক দেশেই আছে ছোট বড় অসংখ্য সাপের খামার। বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও চীনে সবচেয়ে বেশি সাপের খামার গড়ে উঠেছে। ওই দেশগুলোতে সাপের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। সাপের মাংসের স্যুপ চীনে জনপ্রিয় খাবার। এছাড়াও সাপের বিষ, দাঁত ও চামড়ারও ব্যাপক চাহিদা আছে সেখানে।

jagonews24

সাপের বিষ ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ওষুধ ও প্রতিষেধক হিসেবে। যেগুলো আবার ব্যবহার হয় সাপের কামড়ের পর বিষের প্রতিক্রিয়া কমাতে। বাংলা প্রবাদ বিষে বিষক্ষয় হয়তো এসেছে এখান থেকেই। তবে বাহ্যিক দিক থেকে দেখতে খুব সহজ মনে হলেও এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ।

অনেক সময় খামারের কর্মীরা মারা যান তাদের পোষা সাপের কামড়েই। চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের জিসিকিয়াও ফ্যাং ইয়িন এবং তার স্ত্রী ইয়াং জিয়াওক্সিয়া সাপের খামার গড়ে তোলেন নিজ উদ্যোগে। তারা যে গ্রামে থাকেন সেখানে খুব সাপের উপদ্রব ছিল। প্রায়ই বসতবাড়িতে কোবরা, অজগর, ভাইপারসহ বিষধর সাপ দেখা যেত। এগুলো জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসতো খাবারের খোঁজে। যে কারণে অনেকেই এই জায়গাটিকে ‘সাপের গ্রাম’ বলে ডাকেন।

jagonews24

এরপর এই দম্পতি চিন্তা করলেন এসব সাপ মেরে না ফেলে তারা কাজে লাগাতে পারেন। পালন করলে এক সময় তারা সাপের মাংস, চামড়া ও বিষ বেশ ভালো দামেই বিক্রি করতে পারবেন। কেননা এগুলোর চাহিদা বিশ্বের সব জায়গাতেই আছে। এখন তাদের গ্রাম থেকে বছরে তিন লাখেরও বেশি সাপ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে। যারা সরীসৃপের পিত্তথলি, যকৃত এবং চামড়া ব্যবহার করে পুষ্টিকর পরিপূরক তৈরি করে। এরপর জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা এবং ইউরোপে বেশ চড়া দামে বিক্রি করে।

jagonews24

চীনে হাজার হাজার বছর ধরে সাপকে ওষুধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের বিশ্বাস সাপের রক্ত মাংসের তৈরি স্নেক ওয়াইন পান করলে মেরুদণ্ডের রোগ নিরাময় হয়। অ্যালকোহল পান করার আগে গ্রহণ করলে লিভারের ক্ষতি কমায়। সেখানে এক গ্রাম সাপের বিষের দাম ৩ থেকে ৫ হাজার ইউয়ান। এছাড়াও চীনে অনেক রেস্তোরাঁয় রান্নার উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয় সাপের মাংস। যা খুবই জনপ্রিয় এক খাবার। এমনকি দামও অনেক বেশি।

jagonews24

ফ্যাং ইয়িনের গ্রামের ১৭০টি পরিবারের নব্বই শতাংশ আয়ের উৎস সাপ। ফ্যাং আগে কাজ করতেন একটি ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মে। এখন তিনি সাপের খামার থেকেই মাসে লাখ টাকা ইনকাম করছেন। চীনে একেকজন সাপচাষি বছরে প্রায় ৪ লাখ ইউয়ান আয় করেন। সেখানে প্রথম সাপের খামার শুরু করেন ৬০ বছর বয়সী ইয়াং হংচ্যাং। ১৯৮৫ সালে মাত্র তিনটি সাপ দিয়ে শুরু করেন তার খামার। এখন সাপের মাংস বিক্রি করে বছরে প্রায় ২০ লাখ ইউয়ান আয় হয় তার।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।